মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে হুন্ডি চুরির মাধ্যমে এবং স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত ছয়জন বাংলাদেশির নাম উল্লেখসহ অজস্র অজ্ঞাতনামা অন্য সাত থেকে নয়জনের বিরুদ্ধে সিআইডি একটি মামলা দায়ের করেছে। বুধবার সিআইডি প্রকাশ করে এ তথ্য। সংস্থার মতে, এ ঘটনা সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। মামলা প্রথমে রাজধানীর কোতয়ালী থানায় করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫০), ওয়াহিদুজ্জামান (৫২), মোঃ গোলাম সারওয়ার আজাদ (৫১), মোঃ তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির (৪৯), রাজীব সরদার (৩৭) ও উজ্জ্বল কুমার সাধু (৩৮)। এছাড়া আরো অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৭ জনের বিরुद्ध মামলা করা হয়েছে। বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি মার্কিন নাগরিক প্রতারণার শিকার হন। তখন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য চালে। এ সময় তারা জানতে পারেন, ডেবোরাহ জন্সটন রামলো নামে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে এই ফৌজদারী চক্রের যোগাযোগ হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এই চক্র ড্রাগ এফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ) পরিচয়ে দুই লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫১ টাকা) অর্থ আত্মসাৎ করে। এরপর তারা এই টাকা বিভিন্নভাবে, notably ব্ল্যাকমেইল ও ছল চাতুরির মাধ্যমে, আমেরিকার ভুক্তভোগী এই নাগরিককে বাংলাদেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা পাঠাতে বাধ্য করে। এই চক্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে, টাকা গ্রহণ ও লেনদেন চালিয়ে আসছে। তারা এ ধরনের অবৈধ অর্থের লেনদেন বেশ দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে অবৈধ লেনদেন করে। উল্লেখ্য, আইনক্স ফ্যাশনের নামে ইউসিবিএল, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নামে ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও এনআরবিসির অ্যাকাউন্ট, জামান এন্টারপ্রাইজের ব্র্যাক ব্যাংক এবং নোহা এন্টারপ্রাইজের সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এসব অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনের নথিপত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের অ্যাকাউন্টেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে।
অ্যান্টিগ্রাম তদন্তে আরো জানা গেছে, স্বর্ণ চোরাচালানের চক্রের সঙ্গে এই অর্থচোরাকারবারগুলো জড়িত। তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করে গলিয়ে পাকা সোনার বার তৈরি করে দেশের বিভিন্ন দোকান ও বাজারে পাচার করে থাকে। এসব স্বর্ণের বেশিরভাগ ভারতে পাচার হয় সাতক্ষীরার সীমান্ত দিয়ে।
প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে, এই অপরাধ চক্রের মাধ্যমে মোট প্রায় ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৩৭২ টাকা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করা হয়েছে। এই অর্থের অপচয়, অর্থ הচরানো ও সম্পদের মালিকানা অর্জনের জন্য লেনদেনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তদন্তে উঠে এসেছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, যার মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কিছু আসামির নাম, ঠিকানা খুঁজে বের করে সব দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেছে সিআইডি।
Leave a Reply