জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক আলোচনা কেবল রাজনৈতিক সমঝোতার এক ফাঁকা বুলি নয়; এর জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, আগামী বছরের জন্য জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক সমঝোতার নয়, এটি একটি আইনি নীতিমালা এবং এর জন্য দৃঢ় আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। এনসিপি ইতিমধ্যে জানিয়েছে, তারা যদি সরকার এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য খসড়া আদেশের প্রস্তাব দেখে সম্মতিকর স্বাক্ষর দেয়, সেটিই হবে।
পাটওয়ারী আরও বলেন, গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে একটি রূপরেখা সুপারিশ করেছে যা এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কমিশন দুটি পৃথক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে—একটি সংবিধানবিরোধী সংস্কার, যা প্রজ্ঞাপন ও খসড়া সুপারিশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে, এবং অন্যটি বিরতী সরকারকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্ত। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে দুটি আলাদা খসড়া সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমটি, প্রস্তাব-১, বাস্তবায়নের জন্য সরকারের এগিয়ে যাওয়া উচিত কারণ এতে উল্লেখ রয়েছে—নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ না হলে, গৃহীত খসড়া বিলই আইনে পরিণত হবে।
এছাড়াও, সংবিধান সংশোধন বিলটি আইন আকারে কার্যকর করে গণভোটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করাও জরুরি বলে দাবি করেন তিনি। কোণঠাসা বা দ্বিধাবিধুর না হয়ে, সরকারের উচিত প্রস্তাব-১ অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কিছু ভাষাগত অস্পষ্টতা থাকলে সেগুলো সংশোধন করতে হবে, যাতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। প্রথম ঘোষণাটি গ্রহণের মাধ্যমে এই সনদের আইনি ভিত্তিও প্রতিষ্ঠিত হবে।
সরকার যদি এই আইনি ভিত্তিসম্পন্ন খসড়া আদেশ অনুমোদন করে, তবে সনদে স্বাক্ষর এবং বাস্তবায়নের পথে অগ্রগতি সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে এক লক্ষাধিক জনতার ওপর ভিত্তি করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ জারির প্রস্তাব রয়েছে।
এই খসড়াগুলোর মধ্যে প্রথমটির বিধান অনুযায়ী—আগামী দেশের সংবিধান সংস্কার কমিটি ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করলে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতকৃত বিলই আইন হিসেবে গণ্য হবে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রস্তাবের সূত্রে, এই সময়সীমার মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য পরিষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সংবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্ভব হয়।
Leave a Reply