ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বহু আলোচনা ও গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। অভিনেত্রীর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক আত্মহত্যার দাবি করলেও, বর্তমানে আদালতের নির্দেশে তার অপমৃত্যুর মামলা এবং হত্যা মামলা হিসেবে এটি গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর রাতেই সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করেন তার মামা আলমগীর কুমকুম, যাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরপরই বিভিন্ন অপপ্রচারে তার সাবেক সহ-অভিনেত্রী শাবনূরকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয় বলে তিনি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সম্প্রতি (২৭ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে শাবনূর বললেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ২১ অক্টোবর রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আমি তখন বিদেশে থাকায় খবরে对此 জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমি এই রহস্যের বিস্তারিত জানি না, তবে আমার পরম প্রত্যাশা সালমানের সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার। দোষী যেহেতু থাকুক, তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক—এটাই আমার একান্ত প্রত্যাশা।’ শাবনূর আরও উল্লেখ করেন, ‘সালমান শাহ আমার জন্য একজন অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা ছিলেন। আমরা একসঙ্গে ১৪টি সিনেমায় কাজ করেছি। সালমান অভিনয়জগতে এক নতুন প্রতিভার নাম, যার সঙ্গে কাজ করে আমি আমার ক্যারিয়ারকে আরও পরিপূর্ণ ও উজ্জ্বল করে তুলেছি। তার অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে ব্যথিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেকের ঈর্ষার কারণ ছিল এবং তার মৃত্যুর পর কিছু অরাজনৈতিক গুঞ্জন বা বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, যা আমাকে মানসিকভাবে গভীর আঘাত করে। তবে আমি আবার বলতে চাই—আমি সত্যিই জানি না সালমান কিভাবে মারা গেছেন। আমি শুধু তার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাইছি, এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি পেতে চাই।’ তিনি শেষের দিকে সালমানের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, ‘সালমানের মা নীলা আন্টির কষ্টকর পরিস্থিতি দেখলে আমি অনুভব করতে পারি। আমি তাদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানাই, এবং সালমান শাহর আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।’ গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে, যেখানে প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্যান্য আসামির মধ্যে রয়েছেন—প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ। সালমান শাহ ও শাবনূর প্রথম জুটি বাঁধেন ‘তুমি আমার’ সিনেমায়। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), এবং ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)। তার অকাল মৃত্যু, সিনেমার দর্শকদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
Leave a Reply