উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সুরের জালের অন্তরালে রয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তির গল্প। সেই তালিকায় প্রথম থাকেন মোহাম্মদ রফি, যিনি একবার রুনাকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে রুনা লায়লা তার স্মৃতিচারণা শোনান।
উপস্থাপক জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘১৯৭৯ সালে জানে বাহার ছবিতে মোহাম্মদ রফির সঙ্গে আপনি প্লেব্যাক করেছেন। শুনেছি, তখন তিনি আপনাকে সম্মানসূচক দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।’
এর জবাবে রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি এখনও ভাবতে পারি না, সেই মানুষটি কতই যেন অনন্য। আমি ছোটবেলা থেকে ওনার গান শুনে বড় হয়েছি। প্রথম বার যখন ওনার ছবি দেখেছিলাম, মনে হয়েছিল এই ভদ্রলোক প্রেম-বিরহের গান এত আবেগ দিয়ে কেমন করে করেন!’
তিনি আরো বললেন, ‘একদিন বাপ্পি লাহিড়ী বললেন, একজন গায়ক আছে, রফি সাহেবের সঙ্গে গান করবেন। আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম, ওরে বাপ রে! খুব আগ্রহ নিয়ে রিহার্সাল শুরু করলাম। স্টুডিওতে গিয়ে দেখলাম, রফি সাহেব ইতিমধ্যেই উপস্থিত, বসে রেওয়াজ করছেন। আমি এসে বললাম, দেরি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। উনি দাঁড়িয়ে গলেন, বললেন, “না, তুমি ঠিক সময়ে এসেছো। আমি আগে এসেছি। তোমার সঙ্গে গান গাইতে পারা আমার জন্য বড় গর্ব!” শুনে আমি কেঁদে ফেলি। উনি আমাকে বললেন, “অবশ্যই, আমি গাইলাম তোমার সঙ্গে। এটা আমার জন্য সম্মানের বিষয়।’’ আমার জন্য এটি ছিল অন্যতম এক স্বপ্নের বাস্তবতা।
রুনা লায়লার মতে, মোহাম্মদ রফি সব সময়ই তার সম্মানের স্থান পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘উনি আমাকে বসতে বলতেই আমি বললাম, আগে আপনি বসুন। উনি বললেন, না, আগে আপনি বসুন। আমি যখন বলছিলাম যে, আপনার সঙ্গে গাইয়া খুব সম্মানের বিষয় আমার, তখন উনি বললেন, “আমারও খুব সম্মান, কারণ আমি আপনাকে সঙ্গে গান করতে পারছি।’’
সম্প্রতি সংগীতজীবনের ষাট বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন রুনা লায়লা। তার সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৬৫ সালে উর্দু ছবি ‘জুগনু’তে গান করার মাধ্যমে। এরপর তিনি দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন।
তিনি বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন এবং অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তার গানের গুণে উপমহাদেশে তার খ্যাতি আলোর মতো বিকশিত হয়েছে। তিনি দেশের অন্যতম উচ্চতম বেসামরিক পদক, স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন এবং দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
Leave a Reply