বাংলাদেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনই জীবনের কোনো এক সময় সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। এই সহিংসতার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে, যা আজ সোমবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’ প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই জরিপে সহযোগিতা করেছিল জাতিসংঘ তহবিল ইউএনএফপিএ।
জরিপের ফলাফল বলছে, ৭৬ শতাংশ নারী গত জীবনে অন্তত একবার তাদের জীবনসঙ্গী বা স্বামী দ্বারা শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী, অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ, গত এক বছরে এই ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশই কখনোই তা প্রকাশ করেননি।
বিবিএস এর মতে, এই জরিপে জাতিসংঘের নির্ধারিত সহিংসতার ধরনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক আচরণসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ বছর বয়সের পর ১৫ শতাংশ নারী নন-পার্টনার বা স্বামী ব্যতীত অন্য কারও দ্বারা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং ২.২ শতাংশ নারী নন-পার্টনার দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
অবশ্য, জরিপ বলছে যে, ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে—তখন স্বামী দ্বারা সহিংসতার হার ছিল ৬৬ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। তবে, এই সব ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির পরও দেখা যায় যে, নারীরা চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা নিতে দ্বিধা করেন। সমাজের بعض রীতিনীতি ও মানসিক চাপের কারণে অনেক নারী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংকটে থাকেন, আর এই কারণেই তারা অনেক সময় মুখ বন্ধ রেখেছেন।
জরিপের আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানায়, জীবদ্দশায় প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) স্বামী বা জীবনসঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই রিপোর্টটি স্পষ্ট করে দেয়, নারীর জীবন থেকে সহিংসতা এখনও এক বিশাল সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান, যা সমাধানের জন্য সামাজিক ও আইনী ব্যবস্থা আরও কঠোর ও কার্যকর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
Leave a Reply