সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন শিক্ষা ভবনের সামনে ৭ কলেজ ছাত্রের বিক্ষোভ এবং সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড ২০২৫ সালে হজে নিবন্ধন শেষ হয়েছে ৪৩,৩৭৪ জনের প্রতিটি চার নারীর মধ্যে তিনজনই সহিংসতার শিকার: স্বাস্থ্য ও সামাজিক জরিপ ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম সাময়িক বরখাস্ত শীতের আগমনী বার্তা: আবহাওয়া অফিসের শৈত্যপ্রবাহের আগাম সতর্কতা নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মির্জা ফখরুল বলছেন, এ দেশের মানুষ পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করবে না সচেতনতা ও টিকাদানেই টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: নূরজাহান বেগম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: আমার ছেলে-মেয়েরা দেশে, আমি কি ভাবে নিরাপদ থাকব? প্রধান উপদেষ্টা রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন
আন্দোলনে আহতরা মারাত্মক মানসিক দুঃখে ভুগছেন

আন্দোলনে আহতরা মারাত্মক মানসিক দুঃখে ভুগছেন

জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে বড় সংখ্যক মানুষ মারাত্মক মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছেন এবং বেশির ভাগই তীব্র আঘাতের পর মানসিক চাপের সাথে লড়ছেন। বাংলাদেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) পরিচালিত এক গবেষণায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্য জানানো হয় সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে, যেখানে বলা হয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি মনোস্তাত্ত্বিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ওই সেমিনারটি ছিল ‘বিয়ন্ড দ্য হেডলাইনস: মেন্টাল হেলথ কন্সিকোয়েন্স অব দ্য জুলাই আপরাইজিং এ্যান্ড মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’ শীর্ষক কেন্দ্রীয় আলোচনাসভা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির আয়োজন করে। সেমিনারটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল—প্রথম ভাগে ‘মেন্টাল হেলথ ইম্প্যাক্ট অব ভায়োলেন্স এ্যান্ড ট্রমা’ বিষয়ের উপস্থাপনায় সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল আহসান জানান, আহত ২১৭ জনের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৮২.৫ শতাংশ এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভোগা মানুষের সংখ্যা ৬৪ শতাংশ। অন্য অংশে ‘ইম্প্যাক্ট অব ট্রমা ও ভায়োলেন্স এ্যান্ড চাইল্ড এ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্ট পপুলেশন’ শিরোনামে অধ্যাপক ডাঃ নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ তুলে ধরেন, শৈশবের ট্রমা ও সহিংসতা কিভাবে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্তকরণ ও মানসিক সহায়তা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ ও আচরণগত সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডাঃ আফজালুন নেসা এবং সঞ্চালক ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুন। মনোরোগবিদ্যায় অবদান রাখা বিশেষজ্ঞেরা বলেন, আহতদের মধ্যে অনেকেরই বিষণ্ণতা ও তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে উদ্বেগ। তারা মনে করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পরও অনেকের মনোভাব সন্দেহজনক বা উদ্বিগ্ন থাকছে। এজন্য রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানসিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং কেন্দ্র চালুর প্রয়োজন। ডাঃ আহসান আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএমইউ, ডিএমসিএইচ, এনআইএমএইচ, সাজেদা ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাকের সমন্বয়ে ‘বিশেষ মানসিক স্বাস্থ্য টিম’ গঠন করা হয়েছে, যারা প্রাথমিক প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে কাজ করছে। এই টিমের মাধ্যমে যাদের মানসিক সমস্যা এখনো গজিয়েছে না, তাদের রক্ষায় মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তারা কাউন্সেলিং, গ্রুপ সেশন এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধের ব্যবহার করছেন। গুরুতর আহতদের জন্য মনোস্তাত্ত্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। আগে থেকেই যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে, সেই সমস্যা আর বাড়তে না পারে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে, যেখানে বিএমইউর ডাক্তাররা সহায়তা প্রদান করবেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করে, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, শিশুর মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন, সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এড, প্রমাণভিত্তিক থেরাপি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করে পরিবার, শিক্ষক ও সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ সহায়তা প্রদান। পারিবারিক সহানুভূতি, সচেতন শিক্ষক ও নিরাপদ সমাজের সাথে যৌথ উদ্যোগ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। অভিভাবকদের অনুরোধ, শিশুর মানসিক কষ্ট বা পরিবর্তন শনাক্ত করলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নিন কারণ দ্রুত পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জটিলতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, বিএমইউসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এই ব্যাপারে হটলাইন চালু করেছে, যেখানে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডাঃ মাহজাবিন মোর্শেদ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শিশুদের মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করে, সাইকোলজিক্যাল থেরাপি, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করে থাকেন। পরিবার, শিক্ষক ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একসাথে কাজ করলে শিশুদের মানসিক সুরক্ষা আরও শক্তিশালী হয়। শিশুর মানসিক কষ্ট বা পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেরি না করে মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নেওয়া জরুরি। তারা বলে থাকেন, দ্রুত হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতের জটিলতা কমানোর মূল চাবিকাঠি। এই পেশাজীবীরা শুধু চিকিৎসকই নন, তারা শিশুর জন্য সহায়ক, পথপ্রদর্শক এবং ভবিষ্যৎ রক্ষাকারী। বিএমইউর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ নাহরীন আখতারও উল্লেখ করেন, ট্রমা, সহিংসতা ও মানসিক অস্থিরতা রোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সবাই যৌথভাবে দায়িত্বশীল ও যত্নশীল হতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd