খুলনা থেকে পরিচিত ছিল নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি একটি আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর, ঢাকায় গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি লিয়াকত শিকদারের সহযোগী সিরাজুল হক চৌধুরীকে বিএনপি-ট্যাগ দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মূল লক্ষ্য ছিল অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি এবং বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা। প্রথমে মিজানুর রহমানকে ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পরে আরও দু’জন ট্রাস্টি যোগ দেন।
জানা যায়, ১৯ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে, সংশ্লিষ্ট অসাধুচক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তখন সিরাজুল হক চৌধুরী এক অফিস আদেশে তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, পবিত্র কুমার সরকার ও সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহকে সাময়িক বিরত থাকার নির্দেশ দেন এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যদিও এই কমিটি বিভিন্ন প্রভাবের মুখে পড়লেও শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব থাকায় তদন্তের প্রতিবেদনটি বের হয়। তাতে দেখা যায়, অর্থ লেনদেনের নানা অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রমাণ। এই বিষয়টি এখনো ইউজিসি তদ্বিরাধীন রয়েছে।
সূত্রগুলোর ভাষ্য, মূলত একটি চক্রের উদ্দেশ্য ছিল পলাতক ট্রাস্টি নেতাদের টাকা সরবরাহ ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডে অর্থ যোগান দেওয়া। এতে বিশেষ করে তালুকদার আব্দুল খালেক ও এস এম কামালসহ পলাতক বেশ কিছু আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে গোপন সংযোগ ছিল সিরাজুল হক চৌধুরী ও অন্যান্য অভিযুক্ত ট্রাস্টিদের।
অভিযোগে আরও জানা যায়, ২০২৩ সালে মেয়র নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল অর্ডার অনুযায়ী শিক্ষক-সহকর্মীদের অর্থ প্রদান করা হয়, যা তদন্ত রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুদক এ বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সমাবর্তন হয়নি এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজও শুরু হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে, বর্তমান ট্রাস্টি মিজানুর রহমান স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সিরাজুল হক চৌধুরী এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেন। তিনি অভিযুক্ত তিন ট্রাস্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। তবে এই তিনজনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, বিএনপির সমাবেশে হামলার মামলা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর পাশাপাশি, এক চিঠিতে দেখা যায়, যেখানে সিরাজুল হক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার সময় সদস্যদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত গড়মিল রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা প্রকাশ পায়, যেখানে শাহিদা খানম নামে একজন কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে অন্য এক রেজিস্ট্রারকে হঠাৎ করে অব্যাহতি দিয়ে দেওয়া হয়। তবে, এর ফলস্বরূপ, এক ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন এবং এই আন্দোলন দমন করতে নানা হুমকি দেওয়া হয়। সিরাজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়, তার গ্রেফতারের জন্য আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বর্তমানে মিজানুর রহমান বলেন, তিনি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, যেকোনো বাধা উপেক্ষা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় স্বৈরাচারের আধিপত্যে থাকায় নানা অনিয়মের অবসান হতে যাচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কাউকেই এক টাকার অবৈধ অর্থ দিতে দেব না।
আরও জানা যায়, অভিযুক্ত ট্রাস্টিরা ঢাকা গোপনে বিভিন্ন বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি শীঘ্রই স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম চালু করবে।
Leave a Reply