সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন দেশে মাথাপিছু আয় ২৫৯৩ ডলার এলো অগাস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে অস্বস্তি রয়ে গেছে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে গেল অর্থমন্ত্রী: জলবায়ু পরিবর্তনে ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, মাত্র ২ বিলিয়ন পেলে যায় জান বাজি স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে, আবার বৃদ্ধি ফখরুল জানান, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে শঙ্কা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বিএনপি বললো, ফ্যাসিস্ট শাসনে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ক্ষমতায় আনবে তারেক রহমানের আশঙ্কা: সহজভাবে নেওয়া ভুলের সংকেত সবকিছু এখন পর্যন্ত ইতিবাচক: সাদিক কায়েম ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই ঢুকেছি
মোগল সিনাই পর্বতের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি আর উন্নয়ন ঝুঁকিতে

মোগল সিনাই পর্বতের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি আর উন্নয়ন ঝুঁকিতে

পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থান সিনাই পর্বত, যা বিশ্বের অন্যতম ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত, বর্তমানে বহুমাত্রিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। এই পাহাড়ের ওপর অবস্থান করে রয়েছে সেই প্রাচীন স্থান যেখানে নাবী মুসা (আঃ) আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই বিশেষ স্থানটি হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত থাকলেও এখন মিসর সরকার এর উন্নয়ন কাজের জন্য বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিনাই পর্বতটি শুধুমাত্র ইসলাম בלבד নয়, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্যও অত্যন্ত পবিত্র স্থান। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই মহান নবী মুসা (আঃ) ঐশ্বরিক বাণী পেতেন। স্থানীয়রা এই পর্বতটিকে ‘জাবালে মুসা’ বা মুসার পর্বত নামে ডেকে থাকেন। বাংলায় অনেকের কাছে এটি তুর পাহাড় নামে পরিচিত হলেও প্রকৃত নাম সিনাই পর্বত, আর আরবিতে এন্টি বলা হয় ‘তুরে সিনাই’। এই অঞ্চলের ধর্মীয় গুরুত্ব অন্যরকম, যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা বছরভর ইখতিয়ারে এই স্থানে গিয়ে তাঁদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে থাকেন। এখন মিসর সরকার এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিতে বিলাসবহুল হোটেল, ভিলা ও মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্ক দানা বাঁধছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে জেবেলিয়া নামে এক বেদুইন সম্প্রদায়ের বাসবাস রয়েছে, যাদের বহু বছর ধরে এ জায়গায় বসবাস। তবে সম্প্রতি এই বসতি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের অনেকের মরদেহও সমাধিস্থল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ লেখক বেন হফলার জানিয়েছেন, এই প্রকল্পকে দেশের উন্নয়ন ও টেকসই বিকাশের একটি অংশ হিসেবে দেখানো হলেও, স্থানীয়দের স্বার্থ উপেক্ষা করে বহিরাগতদের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সিনাইয়ে প্রায় ৪ হাজার জেবেলিয়া বেদুইনের বাস রয়েছে, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই পরিকল্পনা নিয়ে সবচেয়ে সোচ্চার হয়েছে গ্রিস, যেখানে সেন্ট ক্যাথরিন মঠের ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। চলতি বছর মে মাসে এক মিসরের আদালত ঘোষণা দেয়, এই প্রাচীন খ্রিস্টান মঠটি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। এর ফলে গ্রিসের সঙ্গে মিসরের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। গ্রিসের আধিপত্যবাদী ধর্মীয় নেতা আর্চবিশপ দ্বিতীয় ইয়েরোনিমোস এই রায়কে অপ্রীতিকর বলে সমালোচনা করেন। দীর্ঘদিনের আর্চবিশপ দামিয়ানোস এই সিদ্ধান্তকে ‘ভয়াবহ’ আঘাত বলে মনে করেন, যা দলীয় বিভাজন তৈরি করে। অন্যদিকে, জেরুজালেমের গ্রিক প্যাট্রিয়ার্ক বলেছেন, এই স্থান তাঁদের ধর্মীয় অধিকার ও ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে। তিনি উল্লেখ করেন, বাইজেন্টাইন যুগ থেকে এ স্থান মুসলমানদের জন্যও নিরাপদ আশ্রয়। এলাকাটি এখনো আদালতের রায় বহাল থাকলেও, কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। গ্রিস ও মিশর যৌথভাবে ঘোষণা দিয়েছে, এই স্থানটির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষিত থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে শুরু হয় ‘গ্রেট ট্রান্সফিগারেশন’ প্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে নতুন হোটেল, ইকো-লজ, পর্যটন কেন্দ্র, ছোট বিমানবন্দর এবং ক্যাবল কার। তবে, এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্যের ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবী করে পরিবেশবাদীরা। ইউনেসকো পর্যটন অনুরূপ এ অঞ্চলের সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে আহবান জানায়। ২০২৩ সালে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য নির্দেশ দেয়। গত বছর, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচ সতর্ক করে দেয় যে, সিনাইয়ের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, ব্রিটেনের রাজা চার্লসের পক্ষ থেকেও আবেদন জানানো হয় এই প্রাচীন স্থাপনার সংরক্ষণে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে বহু ঐতিহাসিক স্থানসহ সিনাইয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক জমিই ngày দিন ճিে ওঠে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক অস্থিরতা আবারো পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্রমশ, দেশের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে তিন কোটি পর্যটক আকৃষ্টের। স্থানীয় বেদুইনরা দীর্ঘদিনই মৌখিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বলছেন, তাঁদের মতামত ও অধিকার উপেক্ষা করা হচ্ছে। ১৯৬৭ সালের ইসরায়েল সংগ্রাম ও অন্তর্দ্বন্দ্ব শেষে সেনা দখলদারিত্বের পরেও পরিস্থিতি আরও জটিল। জনসংখ্যা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এ অঞ্চলের ঐতিহ্য ও পর্যটনপ্রেমীদের কাছে এক রহস্যময় সত্য। সেন্ট ক্যাথেরিন মঠ হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে টিকে আছে, যেখানে অনেকে দেখতে আসেন নবী মুসা (আঃ) এর ঐতিহাসিক আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের স্মারক, বা প্রাচীন কোডেক্সগুলো। এই সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য এ যেনো এক অনন্য নিদর্শন, যা আতিথেয়তা ও সংরক্ষণ জরুরি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd