মাদাগাস্কারের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সেনাবাহিনীর কর্নেল মাইকেল রান্দ্রিয়ানিরিনা। এর আগে দেশ থেকে পালিত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা। এরপর সামরিক বাহিনী পাল্টা আঘাত হেনে ক্ষমতা কব্জা করে। দেশটির উচ্চ সাংবিধানিক আদালত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে রান্দ্রিয়ানিরিনার নিয়োগ অনুমোদন দেয়, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশজুড়ে পানি ও জ্বালানি সংকটের কারণে ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরু হয়, যার কারফিউ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ১০০ জন। এই খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আল-জাজিরা অনলাইন।
আল-জাজিরার রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার প্রতিদ্বন্দ্বী রান্দ্রিয়ানিরিনা বলেছেন, ‘আজ আমাদের দেশ ঐতিহাসিক মোড় নিয়েছে। দেশের মানুষের পরিবর্তনের জন্য আমাদের তীব্র আকাঙ্খা ও ব্যাপক ভালোবাসা আমাদের নতুন যাত্রার পথ দেখিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, দেশবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনেরা, সঙ্গে ছিলেন আন্তর্জাতিক দূতিপূর্ণ দল, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের সময় রান্দ্রিয়ানিরিনা বলেন, ‘দেশের সকল বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা একটি সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে কাজ করব। আমরা অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং দেশের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। এর আগে সামরিক বাহিনী পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং পার্লামেন্ট ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়েছে।’
আল-জাজিরার সাংবাদিক ফাহমিদা মিলার মন্তব্যে দেখা যায়, রান্দ্রিয়ানিরিনা দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তার পরিকল্পনাগুলো সাবধানে নির্বাচন করেছেন। তিনি মনে করেন, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবিধানিক নির্দেশিকা ও শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নিশ্চিত করা। ৫১ বছর বয়সী এই ক্যাপটেন ইউনিটের কমান্ডার অরক্ষিত ১৮-২৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সর্বসম্মত প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য আলোচনা চলছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে তিনি সেনাবাহিনী বা সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ডের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার নতুন ভূমিকা গ্রহণের সময় সাংবিধানিক আদালতের সমর্থন ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
অন্যদিকে, রাজোয়েলিনার সমর্থকেরা এই পরিস্থিতিতে তার প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে তার ভূমিকা অপরিহার্য। এরই ফলস্বরূপ, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অনেকের আহত ও হতাহত হন। আদালত এই ঘটনার পর নেওয়া আইনি ব্যবস্থা ও পরবর্তী পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে। এরপর ১১ অক্টোবর ক্যাপসাটের সামরিক কর্তারা ঘোষণা করেন, তারা কোনোভাবেই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলির আদেশ দেবে না বলে জানান। এই সব ঘটনাক্রম দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে।
Leave a Reply