ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্য বিরোধের অবসান হতে চলছে। শিগগিরই দুই দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে, যার ফলে ভারতের ওপর আমদানি শুল্ক বর্তমানে ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১৫-১৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম মিন্ট।
সংবাদমাধ্যমটির তিনটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয় হলো জ্বালানি ও কৃষি পণ্য। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি, এই চুক্তি ভারতের জন্য মার্কিন সামগ্রী আমদানির রাস্তা সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের এই আলোচনা চলাকালে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি উভয় পক্ষ। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, তিনি এই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোদি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মোদির এক্স (টুইটার) বার্তায় তিনি লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপের জন্য ধন্যবাদ, আপনার উষ্ণ দীপাবলির শুভেচ্ছার জন্যও কৃতজ্ঞ। এই উৎসবের সময় আমাদের দেশ দু’টি গণতন্ত্রের আলোয় জেগে থাকুক এবং সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াক।”
সংবাদমাধ্যম মিন্তের সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই আলোচনা ফলপ্রসু হলে ভারতের কৃষি পণ্য আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, ভারত হয়তো ‘নন-জিএমও’ বা জিনগত পরিবর্তনহীন ভুট্টা ও সয়াবিন আরও বেশি করে কিনতে চায়।
আশা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুল্কের হার পুনর্মূল্যায়ন এবং উভয় দেশের বাজারে পণ্য প্রবেশের বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনার সুযোগ থাকবে, যার ফলে কোনো বিরোধ হলে দ্রুত সমাধান পাওয়া সহজ হবে।
অন্তর্বর্তী সময়ে, চলতি মাসে আয়োজিত আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এই ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য হলো, ইউক্রেন সংকটের পর ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল বিপুল মাত্রায় কিনে যেন ওয়াশিংটনের চাপ এড়াতে পারে। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি বর্তমানে দেশের মোট চাহিদার ৩৪ শতাংশ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও গ্যাসের আমদানি প্রায় ১০ শতাংশ। এই চুক্তি কার্যকর হলে রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেবে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিমাণ ছিল ৫০ শতাংশ, এর মধ্যে ওই ২৫ শতাংশ শুল্ক রাশিয়া থেকে খুদে অবমুক্তি না থাকায় চলতি সময় ভারতের আমদানি খাতে এই দ্বিতীয় শুল্কের যোগফল ৫০ শতাংশে পৌঁছায়।
Leave a Reply