বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে বিভিন্ন শর্ত ও সুবিধার মাধ্যমে খেলাপি ঋণের নিষ্পত্তির পথ একশো শতাংশ সহজ ও কার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো এখন ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফশিল, পুনর্গঠন করতে পারবে, যার ফলে ঋণগ্রাহকরা সহজে ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন। শুধুমাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্টের মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া যাবে, এর সাথে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড ও সংশ্লিষ্ট খাতের সাধারণ সুদের চেয়ে এক শতাংশ কম সুদ দেওয়া যাবে। ব্যাংকগুলো এই সুবিধাগুলো নিজ włas দায়িত্বে দিতে পারবে। প্রয়োজন হলে, ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সংক্রান্ত আবেদনও করতে পারবে ব্যাংকগুলো। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে বিশেষ অনুকুল পরিস্থিতিতে ঋণ পুনঃতফশিল ও পুনর্গঠন করে অঘোষিতভাবে খেলাপির পরিমাণ অনেক কম দেখানো হত। কিন্তু সরকার পতনের পর এখন এই পরিমাণ দুগুণের বেশি বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি, গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিশেষ কমিটি গঠন করে, যেখানে খেলাপি ঋণ পুনঃতফশিলের সুযোগ চালু হয়েছিল। এখন এই সুবিধাগুলো ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো।
নতুন সার্কুলারে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ব্রিমিত ঋণের হিসাব বিবেচনা করে ব্যাংকগুলো পুনঃতফশিলের জন্য আবেদন করতে পারবে, এবং এই আবেদনসমস্ত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হবে। আবেদনপত্রের ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়াও, যদি দাখিলকৃত ডাউন পেমেন্ট ব্যাংকের মূলধন হয়, তবে তা নগদায়নের এক বছর পর থেকে গণনা শুরু হবে। বিশেষভাবে, একাধি তিন বা তার বেশি পুনঃতফশিলের ক্ষেত্রে আরো এক শতাংশ অতিরিক্ত ডাউনপেমেন্ট আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে নীতি সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না, তবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক। একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণের বিপরীতে এই সুবিধা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ঋণ মূল্যের ব্যাংক বা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বিষয়টি গ্রহণ করতে হবে। ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যাংক নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তবে তা ব্যাংকের বাছাই কমিটির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন সম্পর্কিত নিয়ম অনুসারে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের জন্য সাধারণ প্রভিশন প্রয়োগ করতে হবে। প্রকৃত অর্থের আদায় ছাড়া ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর বা আয় স্থানান্তর অসুবিধা হবে না, তবে শর্তসাপেক্ষে সাধারণ প্রভিশনের জন্য স্থানান্তর করা যেতে পারে। একই সঙ্গে, অতীতের লেনদেন ও সার্বিক পরিস্থিতি দেখেই ঋণের সুবিধা দেওয়া হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য গত বছর খোলা এলসি বা বাকিতে আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতিগুলোকেও হিসাবের আওতায় আনা হবে। গ্রাহক চাইলে, পুনর্গঠন বা এককালীন এক্সিট সুবিধাও নিতে পারবে।
অন্যদিকে, জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণামূলক কাজে সৃষ্টি হওয়া ঋণে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যথাযথ ক্ষতি মূল্যায়ন ও প্রতিষ্ঠানের পুনরায় ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে পুনঃতফশিল বা পুনর্গঠন নিশ্চিত করা যেতে পারে।
আদেশ অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় স্পষ্ট কারণসমূহ উল্লেখ করতে হবে। সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে, ব্যাংক ও গ্রাহক একমত হয়ে চলমান মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া স্থগিতের ব্যবস্থা নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। প্রয়োজনে, সুবিধা ভোগী গ্রাহক যদি শর্ত লঙ্ঘন করে, তবে তার সকল সুবিধা বাতিল করা হবে এবং ব্যাংক আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।
Leave a Reply