সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন ধর্মেন্দ্রের বিপুল সম্পত্তি, কিন্তু হেমা মালিনীর জন্য কিছুই থাকছে না? গায়িকা রোজাকে গুলি, হাসপাতালে মৃত্যু অর্থ আত্মসাতের জবাবে তানজিন তিশার বিবৃতি পুরুষ বাউলদের বিরুদ্ধে নারী বাউলের গুরুতর অভিযোগ প্রিয় টিকটকার ববি গ্রেভসের হৃদরোগে মৃত্যু ঘরের মাঠে ভারতের জন্য বিপদ বাড়ছে ভারতীয়রা হারলে দ্বিতীয়বারের মত ধবলধোলাইয়ের শঙ্কায় টেস্ট সিরিজ ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি ও বাংলাদেশের খেলা কবে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার ভারতের মাটিতে সিরিজ জিতল শোয়েব আখতার বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে যুক্ত থাকছেন শামীমকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা জানানো হয়নি, লিটন দাসের অভিযোগ
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে: বাংলাদেশের ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ার ঝুঁকিতে

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে: বাংলাদেশের ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ার ঝুঁকিতে

বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ, নানা কারণে আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিবেদনে—’বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। এর ফলে, দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে এবং ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। তাদের জীবনমানের অনেকটাই উন্নত হয়েছে, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, এবং পয়ঃনিষ্কাশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো এখন আরও সহজে পেয়েছেন।

তবে, করোনাভাইরাস মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়ে গেছে, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও মন্থর হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য হার ১২.২ শতাংশ থেকে কমে ৫.6 শতাংশে নেমে এসেছে এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭.১ শতাংশ থেকে কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়, ফলে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য দ্রুত কমলেও শহরে এর হার কমে যাওয়ার প্রবণতা ধীর হয়ে গেছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নগর বাসিন্দা হিসেবে জীবনযাপন করছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের বিভাগের প্রধান জাঁ পেম বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে সফল হলেও, বর্তমানে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, জলবায়ুঝুঁকি এবং কাজের সুযোগের অপ্রতুলতার কারণে শ্রমশক্তির আয় কমে গেছে। তিনি পরামর্শ দেন, দারিদ্র্য কমানোর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে যুবক, নারী এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের সুযোগ বাড়ানো জরুরি। তাঁর মতে, টেকসই উন্নয়ন ও দরিদ্র-বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত দারিদ্র্য এড়াতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উৎপাদন খাতে নিজেদের কাজের সুযোগ সীমিত, এর পরিবর্তে কম উৎপাদনশীল খাতে বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে, যা নারীদের এবং তরুণদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে একজন বেকার, এবং অনেক শিক্ষিত নারীর কাজের সুযোগ নেই। শহরেও, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে, কর্মসংস্থান তৈরি খুবই কম। ফলে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছে, যা শ্রমশক্তির দক্ষতা ও চাহিদার মধ্যে বৈষম্য নির্দেশ করে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন বাংলাদেশে অন্যতম দারিদ্র্য উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। প্রবাসে থাকা পরিবারের আয়ে দেশের দারিদ্র্য কমে আসছে, তবে বিদেশেরা ঘিঞ্জি শহুরে এলাকায় জীবনযাপন করেন যেখানে জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। বিদেশে যাওয়ার খরচ অনেক বেশি, যার জন্য সাধারণ পরিবারের পক্ষে এটি সম্ভব নয়। পাশাপাশি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে, তবে এর ব্যবস্থাপনা অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পেয়েছেন মোট সুবিধাভোগীর মধ্যে ৩৫% ধনী পরিবারের লোকজন, যেখানে অর্ধেক অতি দরিদ্র পরিবার সুবিধা পায়নি। subsidies দেওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যভিত্তিকতা কম, এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বিভিন্ন ভর্তুকির বেশিরভাগটাই ধনী পরিবারেরাই পেয়ে থাকেন।

দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমানোর জন্য চারটি মূল নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে: উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো; দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি; আধুনিক শিল্পে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ তৈরি; এবং কার্যকর, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু।

বিশ্বব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়েছে, বিশেষ করে পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্য। তবে জলবায়ু পরিবর্তন শহর ও গ্রামাঞ্চলে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। তিনি জানান, উদ্ভাবনী নীতি, যোগাযোগ উন্নতি, শহরে গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি ক্ষেত্রে সহায়ক মূল্যশৃঙ্খল ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ দারিদ্র্য কমানোর গতি আবার বাড়াতে পারে এবং সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd