ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজের উত্তাপের মধ্যে গতকাল ক্রাইস্টচার্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটি আকর্ষণীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ছিল অনেকের জন্য বেশ দারুণ এক চমক। এই ম্যাচটি শুরুতে একটু আড়ালেই থেকে যায় যেন, তবে দিন শেষে এটি হয়ে ওঠে টেস্ট ক্রিকেটের এক অনন্য ম্যাচের উদাহরণ। নানা কারণেই এই ম্যাচ হঠাৎ করে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনোযোগ কেড়ে নেয়।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৭ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবীয়রা দ্বিতীয় ইনিংসে চমক দেখিয়ে ৫৩১ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করায়। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ থেকে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখানোর জন্য তারা প্রেরণা পান। অচিরেইই বোঝা গেল, এই ম্যাচটি কেবল নির্দিষ্ট দিক থেকে না, বরং পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে লোভনীয় করে তুলবে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়রা ৬ উইকেটে ৪৫৭ রান সংগ্রহ করে। এই ইনিংসটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের দৃষ্টান্ত, যা প্রচুর উৎসাহ ও উন্মাদনার জন্ম দেয়। শাই হোপ ১৪০ রান করে দলের নেতৃত্ব দেন এবং তার পরই জাস্টিন গ্রিভসের ব্যাট থেকে এক চমৎকার ২০২ রানের ইনিংস আসে। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৮৮ বলের মোকাবিলায়। তার সাথে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন টেলএন্ডার কেমার রোচ, যিনি ৫৩ রানে টিকে থাকেন এবং বলখেলেছেন ২৩৩টি।
প্রতিপক্ষের কাছ থেকে জেতার জন্য শেষ কথাটা বলার খুব কাছেই থাকলেও দিনের শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকল। কিছুটা সময় থাকলে হয়তো এই ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত। ক্যারিবীয়দের ডাগআউটে ড্যারেন সামিদের উচ্ছ্বাস দেখে বোঝা গেল, তারা আসলে জয়ই চাইছিল। এই ড্র ছিল ক্রিকেটের জন্য যেন এক চমৎকার নাটক, যা দর্শকদের মনোযোগ কেড়ে নিল।
এই প্রথম টেস্টে, ক্রাইস্টচার্চে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৩১ রান করে, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৬৭ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দলটির প্রধান খেলোয়াড়রা অসাধারণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। অধিনায়ক টম লাথামের ১৪৫ এবং রাচিন রবীন্দ্রর ১৭৬ রানের ইনিংস যেখানে দলের বড় সংগ্রহের ভিত্তি হয়, সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষকে আসল চাপে ফেলে দেয়।
প্রথমে বড় রান তাড়া করতে নেমে সফরকারীরা শুরুতেই বেশ জনপ্রিয় উইকেট হারান। ২৪ রানে শুরু করে ৭২ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের মাধ্যমে বিপদে পড়ে যায়। জন ক্যাম্পবেল ১৫, ত্যাগনারায়ান চন্দরপল ৬, অ্যালিক আথানাজে ৫ এবং অধিনায়ক রোস্টন চেজ ৪ রানে আউট হন। তবে শেষ মুহূর্তে শাই হোপ এবং জাস্টিন গ্রিভসের দৃঢ়তা সেই পরিস্থিতি বদলে দেয়। শতরানের জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পুনরাই লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন তারা। এই পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে জাম্বেক ডাফি সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন।
সবশেষে, এই নাটকীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি সমাপ্তির পথে থাকলেও ফলাফল নির্ধারিত হয়নি। এইসময় যদি আরও কিছু সময় থাকত, হয়তো এই ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। তবে ক্যারিবীয়দের আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তা স্পষ্ট দেখিয়েছে, এই ড্রও কেবল এক অর্জন নয়, এটি সত্যিই ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক ছোট আনন্দের ব্যাপার।
Leave a Reply