আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময়ের শাসনামলে র্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের লোকদের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছিল। তবে, পলাতক থাকায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত জেডআই খান পান্না আদালতে হাজির হননি, এজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে তলব করে।
আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারপanar সঙগে এই শুনানি শুরু হয়।
প্রথমে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানির সময় স্টেটের পক্ষ থেকে জেডআই খান পান্নাকে ফোন করে আসতে বলা হয়। এরপর, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে হুইলচেয়ার করে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে উপস্থিত হন পান্না।
তখন, ট্রাইব্যুনাল তার কাছে তাকে শুনতে চায়, কারণ তিনি সুস্থ আছেন কিনা, এবং কেন তিনি আদালতে আসছেন না। ট্রাইব্যুনাল জানায়, আপনাকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আপনি না থাকায় আজ শুনানি করতে হয়েছে। আপনার আগ্রহ থাকলে আবারও আসতে পারেন।
জেডআই খান পান্না উত্তরে বলেন, আমি শারীরিক অসুস্থ, তাই আমি এই মামলায় আদালতে উপস্থিত হতে পারছিনা। আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এ বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপনার ক্লায়েন্ট আদালতে হাজির থাকবেন না। আপনি নিজেও আসেননি। আপনি আইনি লড়াইয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন, এজন্য ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দিয়েছে। আপনি যদি উপস্থিত না হতে চান, তাহলে আপনাকে সেটাই জানাতে হবে। এছাড়া, আপনি একটি ভিডিও বার্তায় মন্তব্য করেছেন যে, আপনার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না। ট্রাইব্যুনাল এটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করে না। আমরা কি এই বিষয়টি আপনার কাছে পরিষ্কার?
জেডআই খান পান্না বলেন, আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি মৌখিকভাবে আনকনডিশনালি apologise করছি।
পরে, মামলায় কে একজন আইনজীবী হবেন তা নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আশা করবো আপনাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবো। তবে, এখানে কারো পরিবর্তে নতুন আইনি উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়েও চিন্তা করছি। কোন নাম না বললেও, মো. আমির হোসেনের নাম নেওয়া হয়, যিনি এর আগে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন।
এর আগে, ২৩ নভেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির দিন ধার্য ছিল। তখন, শেখ হাসিনার পক্ষে এ মামলায় দাঁড়ানোর জন্য জেডআই খান পান্নাকে বলা হয়, এবং তাকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এই মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরপ্রাপ্ত), র্যাবের সাবেক গোয়েন্দা শাখার পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
অন্যদিকে, পলাতক রয়েছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত, যার মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
Leave a Reply