নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পরও বাংলাদেশ বাংলাদেশের জয় বঞ্চিত হয়েছে। স্কোরলাইন ছিল বাংলাদেশ ২, নেপাল ১, এবং ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটে সায়মন সানি চতুর্থ রেফারির হিসেবে ইনজুরি সময় দেখান। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে নেপাল কর্নার থেকে আরও এক গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরায়, ফলে বাংলাদেশের জয়ে বাধা সৃষ্টি হয়।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল ১-০ গোলে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হামজা চৌধুরী দুই গোল করে দলকে লিড এনে দেন। এরপর বাংলাদেশের খেলা বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৮০ মিনিটে কোচ হামজাকে বদলি করে দেয়ায় দল যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। তবে নেপাল ম্যাচে একটু প্রাণচঞ্চলতা দেখা যায়।
তবে ইনজুরি সময়ে বাংলাদেশের জন্য আবারও দুঃসংবাদ আসে। চারদিক থেকে নেপাল একটি আক্রমণ চালায়, যেখানে ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। এরপর তৃতীয় ইনজুরি মিনিটে নেপালের অনন্ত তামাং দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে ফ্লিক করে বল ক্রসবারের নিচ দিয়ে জালে পাঠাতে সক্ষম হন। বাংলাদেশের ডিফেন্স জটলা ও গোলরক্ষক মিতুল মারমা পার পেয়েও পাননি। এতে করে মারাত্মক উল্লাসে ওঠে নেপাল।
এমনকি শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ম্যাচ হারাকে বাংলাদেশ অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ৯ অক্টোবর ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে সমতা আনার পর ইনজুরি টাইমে গোল খেয়ে ম্যাচ হারেছিল তারা। প্রীতি ম্যাচেও এক মাসের মধ্যে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখা গেল।
আগামী ১৮ নভেম্বর ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজ নেপালের বিপক্ষে খেলেছে জামালরা। মোচারেল ম্যাচের প্রথমার্ধে সফরকারী নেপাল ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল।
ম্যাচের ৩২ মিনিটে নেপাল এক গোল করে। বাঁ প্রান্ত থেকে তারা আক্রমণ চালায়। বাংলাদেশের ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন তার মার্কিং অক্ষম হওয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। নেপালির ফরোয়ার্ডের কাটব্যাক ও বাংলাদেশের ডিফেন্সের ভুলে গোলটি হয়। রোহিত চাদের জোরালো শট বাংলাদেশের ডিফেন্স ও গোলরক্ষককে অতিক্রম করে যায়।
হোম ম্যাচ, প্রায় দুই সপ্তাহের কঠোর অনুশীলন শেষে হলেও বাংলাদেশের প্রথমার্ধে আশানুরূপ পারফরম্যান্সের দেখা মেলেনি। বল দখলে থাকলেও পরিকল্পিত আক্রমণে না আসা ও ফরোয়ার্ড রাকিব ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম গোলের সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি।
খেলা চলাকালীন হামজা মাঠ জুড়ে বিদ্যমান ছিলেন। আক্রমণের সময় তিনি হাত তুলে বল চেয়েছিলেন, কিন্তু সতীর্থ সোহেল রানা তাকে পাস না করে উল্টো ভুল শটে এগোতেন। হামজা ডান প্রান্তে ড্রাইভ করে তার দক্ষতা দেখিয়েছেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সোহেল রানাকে বদলে সাবিত সোমকে নামান কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই ফাহিম বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস দেন। নেপাল ডিফেন্ডার তা ক্লিয়ার করলেও, অধিনায়ক জামাল বল পেয়ে যান। তিনি বলটি উপরে তুলে হামজার উদ্দেশ্যে পাঠান এবং হামজা বক্সের মধ্যে জোরালো শট নিয়ে গোল করেন। এই গোলের সঙ্গে সাথে গ্যালারি উল্লাসে ভরে ওঠে, কারণ বাংলাদেশ সাধারণত বাইসাইকেল কিকের মতো গোল খুব কম করে।
গোলের আধ ঘণ্টা পর আবার গোল করে বাংলাদেশ। এইবার তারা একটি পেনাল্টি পায়। সুমন শ্রেষ্ঠা বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিবকে বক্সে ফাউল করেন। রাকিব বলের পেছনে ছুটছিলেন, তখন সুমন তাকে বাধা দেন। রেফারি কাওসুন লাকমাল পেনাল্টির নির্দেশ দেন। হামজা এই সুযোগে বল জালে জড়ান এবং বাংলাদেশের জন্য লিড নিশ্চিত করেন।
হামজা প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছিলেন শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে ২৫ মার্চ ম্যাচে। তারপর ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে গোয়া ম্যাচে প্রথম গোল করেন। ৯ অক্টোবরে হংকংয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফ্রি কিকের মাধ্যমে তার দ্বিতীয় গোলটি করেন। আজকের জোড়া গোলের মাধ্যমে হামজার গোল সংখ্যা দাঁড়াল ৪, ম্যাচের সংখ্যা ৫।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় কিউবা মিচেলের। তাকে কোচ ৮০ মিনিটে হামজার বদলি করেন। পাশাপাশি, এই ম্যাচেরও বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ফুটবলার পরিবর্তন নিয়ে কোচের দ্বিধা ছিল। প্রীতি ম্যাচ হওয়ার কারণে দুই দলের সম্মতিতে ছয়জন ফুটবলার বদলানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ করে ছয়টি বদলি, যার মধ্যে রয়েছেন সোহেল রানা, জামাল, ফাহিম, হামজা ও জায়ান। তবে এই পরিবর্তনের মাঝে কিছু ফুটবলার হালকা চোটে পড়েছেন, যার ফলশ্রুতিতে ডাগ আউটে তাঁদের বিশ্রাম নেওয়া হয়।
Leave a Reply