ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা চলাকালে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, বিএনপি সেই সব প্রতিষ্ঠানকে আবার শক্তিশালী করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই উদ্দেশ্যে বিএনপিকে শক্তিশালী করে তুলতেই হবে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। গণতন্ত্রের ধ্বংস, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনীতির ক্ষতি, পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার লুটেরূপে ধ্বংস হয়েছে। এই সময়টিতে বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলো ব্যাপক সংগ্রাম ও লড়াই চালিয়ে গেছে। তাদের নেতাকর্মীদের অনেককে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে এবং চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২৪শে জুলাই কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্র, তরুণ, শিশু, নারীসহ সর্বস্তরের জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর জুড়ে হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়েও গত ১৫ বছরে আমদানিন্তরে প্রায় ১২ জন শহীদ হয়েছেন। জুলাই মাসে চারজন শহীদ হয়েছেন। এই অঞ্চলসহ সমগ্র দেশে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা শতাধিক মামলা করে হাজারো গণতান্ত্রিক কর্মীকে হয়রানি ও নির্যাতনের পালা চালিয়েছে।
মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, বিএনপি একটি ঐতিহাসিক দল। আজ আমরা একটি মুক্ত পরিবেশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির সম্মেলন করতে যাচ্ছি, এই উপলক্ষে আমরা আমাদের ১২ জন শহীদ সহকর্মীকে স্মরণ করছি। তিনি স্মরণ করেন, স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতंत्रের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতीयতাবাদী দল গঠিত হয়, যা দীর্ঘ ৪৭ বছর আন্দোলন করে আসছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, প্রাণ দিয়েছে এবং কখনোই গণতন্ত্রের লড়াই থেকে সরে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াও দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্র ফিরে এনেছেন। তিনি কোনদিন মাথা নত করেননি। সেই মহান নেত্রী এখনো দেশের নেতৃত্বে আছেন এবং তার জন্য আমরা গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিনি আশাবাদী যে, দেশের তরুণ ও এমন সব নেতৃবৃন্দের প্রতি সকলের নজর রয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনগুলোতে জাতি আবারও গণতন্ত্রের পথ শক্তিশালী করবে। তিনি বুঝানোর মাধ্যমে জানান, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনে দেশ ভেঙে গেছে, সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী করার জন্য বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, আমি নিজেও এই সংগ্রাম ঘরানার একজন।
২০১৭ সালে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ আট বছর নানা জটিলতার কারণে আর সম্মেলন হয়নি। তবে এখন সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। সম্মেলনের জন্য সুবিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দের ধারণা, সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমিন সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন—সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পয়গম আলী, ওবায়দুল্লাহ হক মাসুদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শরিফুল ইসলাম শরীফ। এর মধ্যে শরিফুল ইসলাম গত রোববার রাতে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। এই নির্বাচনে মোট ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকারে নেতৃত্ব বেছে নেবেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হান্নান হান্নু জানান, সম্মেলনে পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার মোট ৮০৮ জন কাউন্সিলর,সংগঠনের আরও ৪ হাজার নেতাকর্মী, বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথি ও সমাজকর্মীদের উপস্থিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
Leave a Reply