আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি সহজভাবে নেয়া ভুল উদ্যোগ বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সতর্ক করে বলেন, আমরা যদি সব কিছু সহজ করে ভাবি, তাহলে বিপদে পড়তে পারি। এক বছর আগে তিনি বলেছিলেন, আমাদের পরিস্থিতি সহজ নয়, বরং এটা জটিল একপ্রকার।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে তিনি লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এই সম্মেলনে বিভিন্ন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও জাতীয় ঐক্য কমিশন বিষয়ে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে অংশগ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিয়েছে, তবে কিছু বিষয় নিয়ে মতান্তর থাকায় সেগুলো দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি বললেন, আসুন জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখি, তাদেরই শেষ কথা। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য জনগণের আস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে জবাবদিহিতা, নির্বাচনী ব্যবস্থা সবকিছু একসময় ধ্বংস করে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা হলেও, এখনও নানা ষড়যন্ত্রের কারণে গণতন্ত্র ধুলোয় মিশে গেছে। শাসক দলের শোষণ, গুম, খুনের ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনে টানা একটি অন্ধকার যুগের শুরু করে।’
তারেক রহমান স্মরণ করে, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ, তা এখন অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশে এখনো স্বৈরাচার চেষ্টার কোনও সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের জন্য যারা জীবনদান করেছে, তাদের আত্মত্যাগের বদলেই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজপথে রক্তপাত, আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছে সাধারণ জনগণ। জুলাই আন্দোলনে নির্বিচারে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা, নারীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা—সবই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু শেষমেশ বিজয় দেশের মানুষেরই হয়, শোষকরা পালিয়ে যায়। দেশের মুক্তি ও স্বাধিকার অর্জনে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের জায়গা অপ্রতিরোধ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে নীতিও রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, অন্য দলগুলোরও নিজস্ব পরিকল্পনা ও নীতিসহ রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীল রাজনীতির জন্য প্রয়োজন সবার মাঝে একত্রে কাজ করা। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন, কৃষকদের অধিকার নিশ্চিত করা, বেকার সমস্যা কমানো ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের বক্তব্য দিচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, অবাঞ্ছিত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, স্বৈরাচার ফিরে আসার পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের জন্য সঙ্গত হবে না। সবাইকেই দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে। সরাসরি বক্তব্যের পাশাপাশি যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন যখন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখনই দেশের শত্রুরা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে চায় তারা।
তিনি আরও সাবধান করে বলেন, যারা ভোটের পথে বাধা সৃষ্টি করার চিন্তা করছে, তাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা—ভুল পথে চললে দেশের মানুষ উপকারী হবে না। জনমত ও গণতন্ত্র রক্ষা আমাদের দায়িত্ব।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমিনকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
Leave a Reply