প্রায় দেড় দশক পর প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ পরিবারসহ ঢাকা এসে পা রাখলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা তদানুযায়ী স্বাগত জানান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের বহনে থাকা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা তাকে উষ্ণ স্বাগত জানান। একটি উল্লাসে অংশ নিয়ে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। সামান্য পরে ফুলের মালা দিয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু তারেক রহমানকে বরণ করে নেন। ভেতরে বসে তিনি দেশপ্রেমিক স্বজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা জাইমার সাথে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা; তাদের মধ্যে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই মাহেন্দ্রক্ষণ উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট প্রশস্ত বিশাল এক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। কুড়িল মোড়সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এই মঞ্চ সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে হাজারো নেতাকর্মী ঢোকায় এই শুভ মুহূর্তটি স্মরণীয় করে তুলেছেন।
বিমানবন্দর থেকে তার পরিবার ও নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি পৌঁছবেন পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে, যেখানে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করবেন। এরপর তিনি দেখা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালে। সবশেষে, তিনি যান গুলশান-২ নম্বরের বাসভবনে।
এর আগে, সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে তারেক রহমানের বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ডের পর, এটি বিকেল ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে ফেরেন বিএনপির এই নেতা। তিনি তাদের এই দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর এই শুভাগমনকে জীবনযাত্রার এক নতুন অধ্যায় হিসেবে মনে করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এক অনুভব প্রকাশ করে একলাইনে লিখেছেন, “দ্রুত ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে।”
বিমান সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ ছিল বিডিজি-২০২ বোয়িং ড্রিমলাইনার, যা লন্ডন হিথ্রো থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় পৌঁছেছিল। এই ফ্লাইটের রুট ছিল লন্ডন-সিলেট-ঢাকা এবং তার জন্য A1 সিট নির্দিষ্ট করা হয়।
তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী, কন্যা, ব্যক্তিগত সচিব আব্দুর রহমান সানি, দলের প্রেস উইং কর্মকর্তারা, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা এবং আরও অনেকে।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে প্রায় ১৮ মাস কারাগারে রাখে। পরে, ২০০৮ সালে তারেক রহমানের লন্ডনে চলে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি চিকিৎসার জন্য থাকতেন। সেই সময়ে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে, তার দেশে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিজের প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরলেন তিনি।
Leave a Reply