সরকার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং Juli আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে, Juli আন্দোলনে সম্মুখসারির কয়েকজন ব্যক্তিকে গার্ড ও গানম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও উত্তরের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। পাশাপাশি, আরও কিছু রাজনীতিক ও সংসদপ্রার্থী অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যানের দাবি করেছেন। জামায়াতের এরির ডা. শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছেন।
আবেদনকারীদের প্রেক্ষিতে, বেশ কিছু পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিরাপত্তা দিতে প্রদত্ত গার্ড ও অস্ত্রের লাইসেন্স শিগগিরই প্রদান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই। এর মধ্যে অন্যতম হলেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, জাফির তুহিন, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
অপরদিকে, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে। হাদির এক বোন লাইসেন্স ও গার্ড পাচ্ছেন, এছাড়া অন্য সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। ভবিষ্যত সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আসন্ন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
বর্তমানে, জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ও বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সরকার। শেখ হাসিনার দখলে থাকা ক্ষমতা থেকে নড়ে দাঁড়ানোর প্রতিবাদে দেশে পশ্চিমবঙ্গ-সহ নানা হুমকি প্রদানের খবরও এসেছে। গত বছর ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দোসররা বিভিন্ন হুমকি দিয়ে চলেছে। বিদেশে পলাতক নেতাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে, বিদেশ থেকে ক্ষতিকর হুমকিগুলি অব্যাহত থাকায় সন্দেহ হচ্ছে যে, সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।
সম্প্রতি, বিদেশি নম্বর থেকে ওসমান হাদিকে হত্যার হুমকি ও গুলি করার ঘটনার পুরোপুরি তদন্ত চলছে, যেখানে তাকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে হত্যা করে চিকিৎসাব্যবস্থা দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকার বুঝতে পেরেছে, যতটা সম্ভব তালিকা করে তাদের জীবন রক্ষায় আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। এ ধরনের আরও অনেকে জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যেমন এ বি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদ, এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহ, অন্য রাজনীতিক ও আন্দোলনকারীরা। অধিকাংশ হুমকি ও জঙ্গি হুমকির সঙ্গে এই বাস্তবতাও রয়েছে।
অতএব, দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আন্দোলনকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য গার্ড ও অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন বাড়ছে। তবে, পরিস্থিতি বিবেচনায়, সব আবেদনকে সমানভাবে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ অনেক আবেদনের সঙ্গে যোগ্যতা ও পরিবেশগত সমস্যা জড়িত। বেশিরভাগ আবেদনকারী শিক্ষার্থী ও ছোট ব্যবসায়ী, যাদের নিজস্ব যানবাহন বা গার্ড নেই, তারা নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। সরকারও এসব বিষয় বিবেচনা করে অত্যন্ত সহনশীলতার সঙ্গে তাদের দাবি বিবেচনা করছে।
প্রসঙ্গত, ভবিষ্যত নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে, কিছু প্রার্থী লিখিতভাবে নিরাপত্তা চেয়েছেন এবং আবেদন গ্রহণের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এই প্রক্রিয়ায়, সাময়িকভাবে অনেক আবেদনের উপর ভিত্তি করে অস্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। তবে সব আবেদনকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ পুলিশ বাহিনীর পক্ষে সীমিত সংখ্যক গার্ড ও অস্ত্র সরবরাহ সম্ভব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সূত্র বলছে, অনেকে নিরাপত্তা চেয়ে মৌখিক আবেদন করেছেন, যাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কিছু গার্ড ও অস্ত্রপ্রাপ্তি হয়েছে, তবে সব সদস্যের জন্য নয়। আগামী দিনগুলোতে, মূলত বিচার বিশ্লেষণ ও যাচাই করে, প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন করবে।
Leave a Reply