বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে রাশিয়ান দূতাবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য করতে চাই না। তবে পরিস্থিতি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ, এটি শুধু দুই দেশের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি ভূরাজনৈতিক ব্যাপার, যার নেতিবাচক প্রভাব এলে ফলপ্রসূ সমাধান না হলে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমাতে হবে। এটা জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটাই এখন অত্যন্ত জরুরি। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে খোজিন বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের বড় অবদান ছিল এবং তখন রাশিয়াও সমর্থন দিয়েছিল। সেই সময় আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি, বিশেষ করে মাইন পরিষ্কারের ক্ষেত্রে। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা কমানো উচিত।
আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার প্রসঙ্গে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ বেছে নিতে পারি না। ইউক্রেনের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে—আবার এখানকার পরিস্থিতি নিয়েও আমরা গভীর উদ্বেগে রয়েছি।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের এই অবস্থান লক্ষ্য করেছি যেখানে তিনি সব পক্ষের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে উত্তেজনা কমানো যায়।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রাশিয়ার স্ট্র্যাটেজির কথা তুলে ধরে খোজিন বলেন, আমরা একটি ইতিবাচক, বন্ধুত্বপূর্ণ, অহিংস এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বলেন, বিভিন্ন অস্থিরতা ও সহিংসতার ঘটনাগুলি দেখা যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশে উত্তেজনা কমাতে আমরা আগ্রহী, যা নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে তিনি জানান, আমরা স্বাগত জানাই— তবে এর জন্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ আসা জরুরি। নির্বাচন কমিশনই এই বিষয়ে দায়িত্বশীল। তৎপরতার জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।
পূর্বের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে খোজিন বলেন, রাশিয়া যখন অন্য দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, তখন আমাদের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি, সামাজিক সংস্থার সদস্যরা বা কখনো উচ্চ মাধ্যমিক দপ্তরের প্রতিনিধিরাও থাকেন। অতএব, নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না এলে আমরা অপেক্ষা করব।
Leave a Reply