 
								
                            
                       সাতক্ষীরা শহরে সম্প্রতি সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, চালের বাজারের স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দেশি চালের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলস্বরূপ, সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা ভোগান্তি কম অনুভব করছেন, তবে পেঁয়াজ ও চালের খরচ তাদের জন্য কিছুটা বেশি হয়ে উঠছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর থেকে ভারতের চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আসন্ন সময়ের মধ্যে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
সাংবাদিকদের সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সূর্যদীঘির সময় সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি সবজির বাজারে গেলে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কিছু সবজির দাম কমে গেছে। কেজির দরে আলু বিক্রি চলছে ১৪ টাকা, এবং বড় বস্তায় ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অন্যান্য সবজির মধ্যে স্থানীয় জাতের বেগুন ৫০ টাকা, বাহ্যিক জাতের ৪০ টাকা, ফুলকপি ৭০-৭৫ টাকা, বাইরের জাতের ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাঁধাকপি ৪৫-৫০ টাকা, ওলকপি ৪৫-৫০ টাকা, টমেটো ৭০-৮০ টাকা, সিম ৪০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, কচুরমোচি ১৫-১৮ টাকা, কচু ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৮-৩২ টাকা, খিরাই ৩৫-৪০ টাকা, ধনে পাতা ৮০-৮৫ টাকা, কাঁচকলা ৩০-৩২ টাকা, পেপে ১৪-১৮ টাকা, ঝিঙে ১৫ টাকা, ধুন্দুল ১০-১২ টাকা, ধেড়স ১৩-১৫ টাকা, চিচিংগা ১৪-১৫ টাকা, উচ্ছে ২৫-২৮ টাকা, ওল ১০০ টাকা ও মারঙ্গাজ জাতের ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজি যেমন, আলু ৪৫-৫৫ টাকা, জলপাই ৪৫-৫০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, লাল শাখা ৭ টাকা, পালংশাক ১০-১২ টাকা, লাউ ১২-১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, কাঁচামরিচের দাম ১০০ টাকা কেজি, তবে খুচরাতে তা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে এ সবজির দাম আরও ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে সরবরাহ বাড়ার কারণে এখন দাম কমতে শুরু করেছে।
সুলতানপুর বড়বাজারের সবজির আড়তদার মিয়ারাজ হোসেন জানান, কিছুদিন ধরে স্থানীয় শীতকালীন সবজির ওঠানামা শুরু হয়েছে। বাজারে সরবরাহের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও নিম্নগামী হওয়াতে আগের মত ক্রেতাদের জন্য সবজির দাম কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সামনে যত দিন যাবে সবজির দাম আরও কমবে।
অপরদিকে, বাজারে স্বস্তি ফিরলেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা হিসেবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়, যেখানে এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৩-৬৫ টাকা। পাশাপাশি, আদা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা, রসুনের প্রকারভেদে ৬০-৮০ টাকা কেজি।
সুলতানপুর বাজারে পাইকারি আড়তদার আব্দুল আজিজ বলেন, পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি হয়েছে। কেজির মধ্যে ৩ থেকে ৫ টাকার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
চালের বাজারও গত দুই মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতীয় চালের আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশীয় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। তবে ভারতের চাল এখন কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি, মিনিকেট চাল ৬৮-৭০ টাকা, ২৮ জাতের চিকন চাল ৬৪ টাকা এবং মোটা জাত ৬০-৬১ টাকায়। অতিরিক্ত, আতপ মোটা চাল ৪৬ টাকা, এবং আতপ চিকন ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বাসমতি চালের দাম ৮২-৮৩ টাকা কেজি। ভারতের চালের মধ্যে অমদানি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা, মিনিকেট ৬৬ টাকা, রতœা ৫২ টাকা, নাজির শাইল ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই মাস ধরে এই দামে চাল বিক্রি চলছে। আমদানি বৃদ্ধির পরেও দর তা বদলায়নি।
চাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া চালের মধ্যে বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলে। ফলে, পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে স্থানীয় বাজারে দাম এখনও বাড়েনি। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হলে, ছড়িয়ে পড়ে এমন ধারণা, দাম বাড়তে পারে।
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ভরতন্ত্র থেকে চাল আমদানির মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে, এই বন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৪৫৮ গাড়িতে একলাখ ৭২ হাজার ৫১১ দশমিক ৪৭৬ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে আমদানি অব্যাহত থাকলে বাজারের স্থিতিশীলতা থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply