সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন শিক্ষা ভবনের সামনে ৭ কলেজ ছাত্রের বিক্ষোভ এবং সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড ২০২৫ সালে হজে নিবন্ধন শেষ হয়েছে ৪৩,৩৭৪ জনের প্রতিটি চার নারীর মধ্যে তিনজনই সহিংসতার শিকার: স্বাস্থ্য ও সামাজিক জরিপ ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম সাময়িক বরখাস্ত শীতের আগমনী বার্তা: আবহাওয়া অফিসের শৈত্যপ্রবাহের আগাম সতর্কতা নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মির্জা ফখরুল বলছেন, এ দেশের মানুষ পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করবে না সচেতনতা ও টিকাদানেই টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: নূরজাহান বেগম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: আমার ছেলে-মেয়েরা দেশে, আমি কি ভাবে নিরাপদ থাকব? প্রধান উপদেষ্টা রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন
মুদ্রাস্ফীতি কমলেও দারিদ্র্য বাড়ছে, কর্মসংস্থান কমেছে: বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ

মুদ্রাস্ফীতি কমলেও দারিদ্র্য বাড়ছে, কর্মসংস্থান কমেছে: বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমার কারণে বেসরকারি খরচে সামান্য বৃদ্ধি দেখা সম্ভব, যার ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগামি ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরও শক্তিশালী হয়ে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদনের প্রকাশ ঘটে। এ সময় একই অনুষ্ঠানে এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট আপডেট নামক অন্য একটি প্রতিবেদনের বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জেন পেসমি ও তার দলের অন্য সদস্যরা এই প্রতিবেদনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। চিফ ইকনোমিস্ট ফ্রানজিসকা লেসলোট ওহসেজ বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়, চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা এই প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এছাড়া, আমদানির স্বাভাবিক হওয়ার ফলে চলতি হিসাবের ভারসাম্য সামান্য ঘাটতির দিকে যেতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্নতির সঙ্গে রাজস্ব আয়ের বৃদ্ধির ফলে জিডিপি অনুপাতের রাজস্ব ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রাখতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনটি মুদ্রাস্ফীতির উন্নতি বিষয়ে নির্দেশ করে, যেখানে পরবর্তী মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাসমান থাকলেও, ২০২৫ সালের আগস্টে তা ৮.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ২০২৪ সালের নভেম্বরের ১৩.৮% থেকে কমে ২০২৫ সালের আগস্টে ৭.৬% এ নেমে এসেছে। এই পরিবর্তনে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা এবং খাদ্য সরবরাহের পুনরুদ্ধার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

নিম্ন আয়ের মানুষজনের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বেশি থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যবধান কিছুটা কমে এসেছে। তবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে চলেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের দারিদ্র্য হার ২১.২% এ পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালে ছিল ২০.৫%। শ্রমশক্তির অংশগ্রহণও কমে গেছে, যেখানে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ হার ৬০.৯% থেকে কমে ৫৮.৯% হয়ে গেছে, মূলত নারীর অংশগ্রহণের হ্রাসের কারণে। এই সময়ে প্রায় ৩০ লাখ কর্মক্ষম বয়সী মানুষ শ্রমশক্তির বাইরে ছিলেন, যার মধ্যে ২.৪ মিলিয়ন নারী। মোট কর্মসংস্থান প্রায় ২০ লাখ কমে ৬৯.১ লাখে দাঁড়িয়েছে, ফলে শ্রমশক্তি অনুপাত ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৫৬.৭% হয়েছে।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা এখনও গভীর উদ্বেগের কারণ। খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে, যেখানে মূলধন-ঝুঁকি-ভারিত সম্পদের অনুপাত এখন ৬.৩%। সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলো মার্জ করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালনাগত ক্ষমতা এবং আইনগত কাঠামো সুদৃঢ় করতে কাজ করছে। তাছাড়া, আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা এবং জরুরি তরল্য সহায়তা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের পথে।

অন্য দিকে, ২০২৫ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য হ্রাস পেয়ে ৪% এ দাঁড়াবে, যা ২০২৪ সালে ছিল ৪.২%। এই হ্রাসের মূল কারণ হলো দুর্বল বিনিয়োগ, রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসায় পরিচালনায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগের অবনমন। এডিপি বা পাবলিক ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের বাস্তবায়নেও ধীরগতি লক্ষণীয়।

প্রতিবেদনে কর-রাজস্বের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়, যেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশের কর-জিডিপি হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এক প্রতিবন্ধকতা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd