নাহিদ ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক, নির্বাচনের পরও জুলাই হত্যা মামলাসহ গত ১৫ বছরের বিভিন্ন হত্যা, নির্যাতন ও গুমের মামলার বিচার অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের কাছে স্পষ্ট করে প্রতিশ্রুতি ও একটি রোডম্যাপ চেয়েছেন। এই দাবির মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করতে চান যে, গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এখনও তার মূল লক্ষ্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশে এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে মঙ্গলবার হাজির হয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। তবে অন্য একজন সাক্ষীর জেরায় সময় বেশি লাগার কারণে তিনি ফিরে যান, কারণ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। নিজের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য না দিয়ে তিনি ফিরে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, তার লক্ষ্য হলো এর থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার রায় হলে আমি রাজনৈতিকভাবে ন্যায়বিচার পাবো। তবে এর পাশাপাশি গত ১৫ বছরে সারাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যা, নির্যাতন, গুমের সব মামলা অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচনের পরেও যেন বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা না আসে, সেটাও আমাদের দাবি। এই দায়িত্ব আমাদের এই সরকারের।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে আমি সন্তুষ্ট। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
অভিযোগকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক ও জনমত গড়ে তুলতে হবে বলেও জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘রায়ের পরে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে খোদ সরকারই শাস্তি নিশ্চিত করবে, এটা অবশ্যই আইনসঙ্গত।’
আজকের আদালতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জেরা চলছিল। দেখা যায়, শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরার অংশ হিসেবে এই সাক্ষ্য নিচ্ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন স্বীকার করেছেন, আন্দোলনের সময় তিনি যে হত্যা, গণহত্যার অভিযোগের স্বীকার, তা সত্য। তিনি জানান, তিনি এই বিষয়ে আদালতে বিস্তারিত তুলে ধরতে প্রস্তুত।
বিচারপতি মোঃ গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ গঠনের সময় মামুনের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে। একই দিন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়। এছাড়াও, অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ হয়।
প্রসিকিউটর গাজি মনোয়ার হোসেন জানান, মাহমুদুর রহমানের জেরা শেষ না হওয়ার কারণে আজ তিনি তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না। তবে, আঞ্চলিক ক্ষোভ, রাজনৈতিক পার্শ্বচরিত্র ও প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার আনুষাঙ্গিক কাজ চলমান থাকবে।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেখ হাসিনার পতনের ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম। এরপর, ৫ আগস্ট তিনি ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। এর অভিযোগপত্র মোট আট হাজার সাতশত চুরাশি পৃষ্ঠার, যেখানে তথ্যসূত্র দুই হাজার আড়াই পৃষ্ঠা, দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পঞ্চাশ পৃষ্ঠা এবং শহিদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার সাতশ চুরাশি পৃষ্ঠার। এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী রয়েছেন।
Leave a Reply