সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন হাদিকে নিয়ে পোস্ট, চমক-মামুনকে হত্যার হুমকি অভিনেত্রীর প্রতি ভিড়ের মধ্যে হেনস্তার ঘটনা করোণা সংগীতজগতের প্রিয়তম ছেড়ে চলে গেলেন ক্রিস রিয়া সালমান খান ৬০ বছরে পা দিচ্ছেন ফরিদপুরের কনসার্টে বিশৃঙ্খলা, জেমসের মন্তব্য ২১ শতকের সেরা ক্রীড়াবিদ মেসি, শীর্ষ দশে আছেন যারা উজ্জয়িনীর ধর্মীয় নেতাদের হুমকির মধ্যে মোস্তাফিজের আইপিএলের ভবিষ্যৎ uncertain নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্প্যানিশ কোচ ও তিন সন্তান বিপিএলের মাঝেই বাংলাদেশ ছাড়বেন কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটার প্রয়াত খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপিএলের ম্যাচ বাতিল
বেগম খালেদা জিয়া আর নেই

বেগম খালেদা জিয়া আর নেই

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু সংবাদটি বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও একই তথ্য জানানো হয়, যেখানে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমাদের দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের প্রার্থনায়ের পরে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তি দান করুন এবং তার জন্য দোয়া কামনা করছি।’ তার জীবনের শেষ সময়টিতে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, এবং তার অবস্থা সংকটময় বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়ে ছিলেন। খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে। তার বাবা ছিলেন ইস্কান্দার মজুমদার, মা তাহিয়া মজুমদার। তরুণ বয়সে তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পরবর্তীতে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে তার বিবাহ হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি ছিলেন ফার্স্ট লেডি এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু শোকাবহ পরিস্থিতিতে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮২ সালে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান ও ১৯৮৪ সালে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। আটের দশকে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, যা তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। দীর্ঘ সংগ্রামে তিনি সাতবার শিরচ্ছেদ ও গৃহবন্দী হয়েছেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সরকারের প্রথম অবদান ছিল দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করা, বিশেষ করে শিক্ষাখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা, যেখানে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা বাস্তবায়িত হয়। ১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্বাচনে হেরে গেলেও, তিনি বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০১ সালে অন্যান্য দলের সঙ্গে জোট গঠন করে আবার প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর বিশ্বস্ততা উপরে তুলে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী নারীদের মধ্যে স্থান দেয়। নির্বাচনী ইতিহাসে তিনি পরাজয়হীন, প্রায় সব নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০১১ সালে তাকে নিউ জার্সি স্টেটের সিনেট ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ হিসেবে সম্মানিত করে। ২০১৮ সালে একটি বিতর্কিত মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়ে। তবে বিভিন্ন দেশের ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষকদের মতে, এই বিচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। প্রায় তিন বছর পর, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় এসব মামলায় তাঁকে অব্যাহত দৃষ্টান্তে খালাস দেওয়া হয়, ও তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রয়াসী, এই মানবতাবাদী নেত্রী আজ আমাদের মাঝে নেই, তবে তার প্রতীকী অবদান ও সংগ্রাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd