অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শেষবার টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর তারা টানা ১৮টি ম্যাচে কোনো জয় পায়নি। তবে অবশেষে সেই দুঃখজনক জয়হীনতা শেষ হয়েছে। মেলবোর্নে চলমান অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে বেন স্টোকসের দল হার মানিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। যদিও এই ম্যাচের বেশিরভাগ খেলাই হয়নি, দিনশেষে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নির্ধারিত ফল এসেছে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জিতেছে।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দুই দলের মধ্যে এই টেস্টের চার ইনিংস মোট ৮৫২ বল খেলা হয়েছে। এর আগে পার্থে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট দুই দিনে শেষ হয়েছিল। সেখানে দুই দল মিলিয়ে খেলেছিল ৮৪৭ বল, অর্থাৎ চতুর্থ টেস্টের চেয়ে ৫ বল বেশি। এই জয় দিয়ে টানা ম্যাচ হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ইংল্যান্ড, পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হোয়াইটওয়াশের অপপ্রকাশ থেকে রেহাই পেয়েছে। এর আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ৫-০, ২০১৭-১৮ সালে ৪-০ এবং ২০২১-২২ সালে ৪-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল।
প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দুই দলেরই প্রথম ইনিংস শেষ হয়। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ৪৫.২ ওভার ব্যাট করে ১৫২ রান সংগ্রহ করে। এরপর ইংল্যান্ড ১১০ রানে অলআউট হয়, ঠিক ২৯.৫ ওভার খেলেই প্রথম ইনিংস শেষ হয়। ফলে সে দিন শেষ বিকালে আহত দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে স্বাগতিকরা। দিনশেষে তাদের লিড ছিল ৪৬। আজ তারা ৮৬ রান করতে গিয়ে ১০ উইকেট হারায়। স্বাগতিক দলের সর্বোচ্চ রান করেন ট্রাভিস হেড, তাঁর ৪৬ রান, যা তিনি ৬৭ বলের ইনিংসে ৪টি চারে সাজিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এ জয়ে স্বদেশি কিংবদন্তি গ্যারি সোবারের রেকর্ড অ্যালান বোর্ডারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে স্টিভ স্মিথ শেষ পর্যন্ত ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাঁর বর্তমান রান ৩৫৫৩, যা বোর্ডারকে ৫ রান পিছিয়ে। ক্যামেরন গ্রিনের ব্যাটে দেখা যায় ১৯ রান। মোটে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার তিন ব্যাটারই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন। ১৩২ রানে আলোর মূল অজির ইনিংস শেষ হয়, ৩৪.৩ ওভারে।
বাংলাদেশের পেসার গাস অ্যাটকিনসন চোটের কারণে দুঃখজনকভাবে ৫ ওভারের বেশির ভাগ কাজ করতে পারেননি, তবে তিনি ১ উইকেট নিয়েছেন। অন্য পেসাররা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলেও সফল হন। ব্রাইডন কার্স চার উইকেট শিকার করেন, স্টোকস ৩, আর জশ টাং ২ উইকেট নেন।
১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ইংলিশরা শুরু করে বেশ আগ্রাসীভাবে। প্রথমে জ্যাক ক্রাউলি (২৬ বলে ৩৪) ও বেন ডাকেটের (২৬ বলে ৩৪) উদ্বোধনী জুটি গড়ে ৫১ রান। এরপর ওয়ানডাউনে টেলএন্ডার ব্রাইডন কার্সকে খেলতে দেখা যায়। তিনি ৬ রান করে আউট হলে, জুটি ভেঙে যায়। পরে জ্যাকব বেথেল আর হ্যারি ব্রুকের ছোট but গুরুত্বপূর্ণ জুটি ইংল্যান্ডকে গন্তব্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে।
অবশেষে, লক্ষ্য অনেক দূরে মনে হলেও রুট, বেথেল ও স্টোকস দ্রুত অতিবেগে আউট হয়ে কাঁটা বাড়িয়ে দেয়। ব্রুক অপরাজিত থাকেন ১৮ রানে। ব্রুক টেস্টে দ্রুততম ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন, তার জন্য তিনি ৩৪৬৮ বল খেয়েছেন। এর আগে, বেন ডাকেট ৩৪৭৪ বলের মাধ্যমে এই রেকর্ড করেন।
মেলবোর্ন টেস্টের মাধ্যমে সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার হারের ধস শেষ হয়। এই পরিস্থিতিতে, এই টেস্টে ইংল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচের সেরা পারফরম্যান্স করেন মিচেল স্টার্ক, জাই রিচার্ডসন এবং স্কট বোল্যান্ড, দু’জন করে উইকেট সংগ্রহ করে।
এുവരെ বক্সিং ডে টেস্টে ভারতের পর ২০১৮ ও ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র তিনবার হেরেছে। এই সিরিজে, ইংল্যান্ডের রান তুলনা ৫.৫ গড়ে হয়েছে, যা অ্যাশেজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পার্থে, ইংলিশরা লক্ষ্য তাড়া করে ৭.২৩ রানের গড়ে ব্যাট করে জিতেছিল। এই টেস্টে দুই দল মোটই ৫৭২ রান করেছে, যা কোনো ব্যাটারের হাফসেঞ্চুরি ছাড়াই টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ মোট স্কোর। এর আগে, ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ৭৮৭ রান এবং ২০১৫ সালে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৫২ রান করেছে, যেখানে কেউ হাফসেঞ্চুরি করেননি।
Leave a Reply