কলকাতায় লিওনেল মেসির সঙ্গে ছবি তোলার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পর শুভশ্রী গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে কটূক্তি ও কুরুচিকর মন্তব্যের ঝড় উঠেছে। এই বিষয়টি নিয়ে বরাবরের মত পা রাখছেন থানা অভিযোগে। টিটাগড় থানায় নির্মাতা ও রাজ চক্রবর্তী লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন।
রাজ চক্রবর্তী ভারতের গণমাধ্যম দ্য ওয়াল-কে জানান, একজন নারীর প্রতি এইভাবে অপমান করার ঘটনায় তিনি বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, এতে রাজনৈতিক উসকানি রয়েছে এবং কারা জড়িত, বিস্তারিত এখনই জানাতে চান না, যাতে তদন্তে সমস্যা না হয়। এই অভিযোগটি এক ধরনের আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি, ১৩ ডিসেম্বরের পরে সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হওয়া বিতর্কেরই অবসান বলে মনে করছে অনেকে।
১৩ ডিসেম্বর কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটি বিতর্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যেখানে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী মাঠে বসে ভারতের ফুটবল ইতিহাসে এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। মাসের পর মাস অপেক্ষা করে, প্রচুর অর্থ খরচ করে ক্লাবের টিকিট কেনার পরও তাঁরা মেসিকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাননি। মাঠের বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের মধ্যে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, আর বিশ্বখ্যাত এই খেলোয়াড়রা তড়িঘড়ি মাঠ ছাড়েন। প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্ত গ্রেফতার হলেও, এর অংগভুক্ত ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।
সেদিন শুভশ্রী যুবভারতীতে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি জানান, তিনি সেখানে শুধুমাত্র বাংলার সিনেমা শিল্পের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেসির সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় বিদ্রুপ, কটাক্ষ ও কদর্য মিমের বন্যা। যেখানে অনেককেই দেখানো হয়, তাঁরা টাকা খরচ করে নিজস্ব প্রিয় খেলোয়াড়কে দেখার সুযোগ পাননি, তখন ক্ষোভ প্রকাশ করাটাই স্বাভাবিক— কিন্তু কেন সেই ক্ষোভের লক্ষ্য একজন অভিনেত্রী, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এই বিষয়টি এবার প্রকাশ্যে এনেছেন রাজ চক্রবর্তী। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন, যুবভারতীর অরাজকতা অনভিপ্রেত, লজ্জাজনক এবং ফুটবলপ্রেমী বাঙালির প্রতি চরম অসম্মান। তিনি প্রশ্ন করেন, এত বড় আয়োজনের পরিকল্পনায় কীভাবে এত গাফিলতি হয়, তার জন্য দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। তাঁর মতে, ওই দিন বাঙালির আবেগে আঘাত এসেছে।
তারপর তিনি শুভশ্রীর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, অনুষ্ঠানে ছিলেন একজন অতিথি হিসেবে, অথচ সেই উপস্থিতির মূল্য দিতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি আরও বলেন, একজন অভিনেত্রী হিসেবে কি তিনি মেসির ভক্ত হতে পারেন না? রাজের ধারণা, একজন মানুষের পরিচয় শুধু পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি মা, বোন, স্ত্রী, অভিনেত্রী কিংবা ভক্ত— সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ।
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ। কেন অনেক সাংবাদিক থাকলেও শুধু একজন অভিনেত্রীই সহজ লক্ষ্য হয়ে উঠলেন, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজের মতে, এই ট্রোলিং শুধু বর্তমানের অপমান নয়, ভবিষ্যতের জন্যও মারাত্মক একটা বার্তা প্রেরণ করে। প্রতিবাদ এবং অপমানের মধ্যে পার্থক্য কি, সেটাই বোঝা জরুরি।
Leave a Reply