১৩ ডিসেম্বর কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পেছনে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার কারণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্ত। বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)-এর জেরায় তিনি জানান, অনুষ্ঠানের সময় অতিরিক্ত ভিড়, অপ্রত্যাশিত স্পর্শ ও বিশৃঙ্খলার কারণে বিশ্ববিখ্যাত এই ফুটবল তারকা নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ ত্যাগ করেন।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে দত্ত বলেন, ‘মেসি পিঠে হাত দেওয়া বা জড়িয়ে ধরা একদমই পছন্দ করেন না।’ তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীরা আয়োজকদের সতর্ক করেছিলেন এই বিষয়ে।
দত্তের ভাষ্য অনুসারে, মাইক দিয়ে বারবার দর্শকদের সংযত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও কেউ ততটা মনোযোগ দেয়নি। ‘যেভাবে মেসিকে ঘিরে ভিড় সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা তাঁর জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ছিল,’ জানান তিনি।
অতিথি অতিথিদের মধ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে অনুষ্ঠান শেষে মেসির কাছাকাছি দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মোবাইল ছবি তোলার সময় মেসির কোমরে হাত রেখেছেন। এই দৃশ্যের কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন অরূপ বিশ্বাস। পরে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, কতজন মানুষ মাঠে প্রবেশের অনুমতি পেল এবং কীভাবে এত বিশাল সংখ্যক দর্শক স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে সক্ষম হয়। দত্ত দাবি করেছেন, প্রথমে স্টেডিয়ামে মাত্র ১৫০টি গ্রাউন্ড পাস ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু এক ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি’ স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেই সংখ্যা তিনগুণে বৃদ্ধি পায়। তিনি অভিযোগ করেন, এই ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে পুরো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ভেঙে যায় এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি অসুবিধায় পড়ে।
দত্তের আরও দাবি, ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি মাঠে প্রবেশের পর সকল পরিকল্পনা বদলে যায়, যার ফলে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এ বিষয়ে পুলিশ এখন তদন্ত করছে যে, পাসের সংখ্যা বাড়ানো কি ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ ছিল।
অতিরিক্তভাবে, শতদ্রু দত্ত জানিয়েছেন, মেসির ভারত সফরের মোট খরচ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেসির পারিশ্রমিক ৮৯ কোটি টাকা, যা ছিল মূল খরচ। এছাড়া, ভারত সরকারকে কর হিসেবে দেওয়া হয় ১১ কোটি টাকা। এই সব খরচের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসে স্পনসরদের কাছ থেকে, অন্য ৩০ শতাংশ আসে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে।
অর্ধশতকের বেশি টাকা দত্তের কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া গেছে, যেখানে তিনি ডলার ও টাকা পেয়েছেন। শুক্রবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ হয়েছে। দত্ত অভিযোগ করেছেন, তার এই অর্থের উৎস হলো কলকাতা ও হায়দরাবাদের মেসি ইভেন্টের টিকিট বিক্রি ও স্পনসরদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ। তবে, তদন্তকারীরা এখনও এই দাবির সত্যতা যাচাই করছে।
সল্টলেক স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শক উচ্চমূল্যের টিকিট কিনেছিলেন, কিন্তু বিনোদনের সময় খারাপ পরিস্থিতির কারণে অনেকের দর্শনীয় স্থান দেখা সম্ভব হয়নি। ভিড়ের বিশৃঙ্খলার কারণে কিছু দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর চালায়।
এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। দলে রয়েছেন পীযূষ পাণ্ডে, জাভেদ শামিম, সুপ্রতিম সরকার এবং মুরলিধর। তারা বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ভাঙচুর, নিরাপত্তা ব্যর্থতা, অনুমতিপত্র লঙ্ঘন, এবং আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা। এই সব বিষয় এখন এসআইটির তদন্তের আওতায়।
Leave a Reply