সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সেনার জানাজা আজ রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শোকাবহ পরিবেশের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর কথা আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে।
নিহত সেনা সদস্যরা হলেন— কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
অনুষ্ঠানে জানাজার আগে প্রতিটি সেনার জীবনী আলোচনা করে তাদের দেশপ্রেম ও ত্যাগের মহিমা সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করা হয়। এরপর তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া পাঠ হয়। পরে দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্বরূপ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর তাদের মরদেহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয় হেলিকপ্টার দ্বারা।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (ইউনিসেফ) আওতাধীন কাদুগলি โลজিস্টিকস বেসে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর অপ্রত্যাশিত ড্রোন হামলায় এই ছয় সেনা নিহত হন। এতে আরও আটজন শান্তিরক্ষী আহত হন, যাদের মধ্যে আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেনিয়ার নাইরোবি অবস্থানরত আগা খান ইউনিভার্সিটিতে স্থানান্তর করা হয়।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অন্যরা এখন শঙ্কামুক্ত। আদতে, বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ শুরু করে, যা এখন বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৬৮ জন সৈনিক, নৌ সেনা ও বিমান বাহিনী সদস্য জাতিসংঘের মিশনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যার মধ্যে এই ৬ প্রাণ দেশপ্রেমের অসামান্য চেতনা ও ত্যাগের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার নিহতদের মরদেহ ঢাকা পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম উপস্থিত সবাইকে সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন ও মরহুমদের জন্য দোয়া ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
Leave a Reply