বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে উঠেছে দেশজুড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী এবং সাধারণ মানুষ সবাই নানা প্রশ্ন তুলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দলের উপদেষ্টা মাহদী আমিন স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উত্তর দিয়েছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) তিনি ফেসবুকে একটি পোস্টে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পর্ব প্রকাশ করেছেন। এই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অন্যতম অনুপ্রেরণা হলো দেশের জন্য গভীর বাসনা ও জাতীয় স্বার্থ। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র একজন নেতার দেশে ফেরার ঘটনা নয়, এটি দেশের মানুষজনের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান, আশা-আকাঙ্ক্ষার এক সংযোগ। এটি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা বিবেচনায়, মাহদী আমিন জানান, তারেক রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ফিরছেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। ফ্লাইটটি সকাল ১১:৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবতরণের পরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারেক রহমানের প্রথম লক্ষ্য হলো তার অসুস্থ মা-বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। এই জন্য তিনি সরাসরি বিমান থেকে গুলশানের নিজ বাসায় যাবেন। তবে, আগেভাগেই দায়িত্বশীলতা ও জনসমাগমের কথা বিবেচনা করে তিনি রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট প্রশস্ত) এলাকার একটি সংক্ষিপ্ত পথ দিয়ে মাত্র কিছু সময়ের জন্য জনগণের সাথে দেখা করবেন ও ধন্যবাদ জানাবেন। এরপর তিনি হাসপাতালে গিয়ে মায়ের পাশে থাকবেন এবং পুনরায় গুলশানে নিজ বাসায় ফিরে যাবেন।
স্থানীয় ঐতিহাসিক স্থানগুলো উত্তমভাবে এড়ানোর কারণ হিসেবে মাহদী আমিন ব্যাখ্যা করেন, এটি একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত ও মানবিক সিদ্ধান্ত। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও স্থানগুলো এক্ষেত্রে এড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, রাজধানীর কেন্দ্র থেকে দূরে অবস্থিত এই ৩০০ ফুট প্রশস্ত ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ এর এক পাশের সার্ভিস লেনকে নির্বাচিত করা হয়েছে মূল কর্মসূচির জন্য—যেখানে তারেক রহমানের সফর সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি সম্পন্ন হবে।
এটি কোনো সংবর্ধনা বা জনসমাবেশ নয়, এটি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি, যেখানে শুধুমাত্র তারেক রহমানই বক্তা থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে দলের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ জনগণ—সবাই উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, নেতাকে এক নজর দেখার আবেগে উদ্বেল।
জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ২০টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও ওষুধের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, হাসপাতালে যাওয়ার পথে আইসিইউসহ অ্যাম্বুলেন্স ও ব্রেকডাউনের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানির সরবরাহ, স্বেচ্ছাসেবকদের সেবা নিশ্চিত করে জনমনে স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেশী ও বিদেশগামী যাত্রী, রোগী ও জরুরি যানবাহন অবাধে চলাচল নিশ্চিত করতে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে আলাদা বাস পার্কিং লেনের ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স ও বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই সব উদ্যোগের পাশাপাশি, ট্রাফিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ ও ট্রাফিক কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এমনকি এ সব প্রচেষ্টার মধ্যেও প্রতিযোগিতা থাকছে, এবং কিছু অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বিএনপি ও এর সহযোগীরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারি ও নির্বাচনকালীন ছুটির কারণে, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। পরে দিনগুলোতেও ছুটি থাকায় মানুষের ভোগান্তি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের জন্য নির্দেশনা হিসেবে যোগ করা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ আচরণ বজায় রাখতে ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা এক সূচনায় মেতে উঠেছেন। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলো ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অবশেষে, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে বেশকিছু বিশ্লেষক এটি দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করছেন। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলে প্রত্যাশা করছে সবাই। এটি দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা, সহনশীলতা ও ঐক্য বাড়াতে সহায়ক হবে—একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
Leave a Reply