অধ্যাপক জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের তিন দফায় ক্ষমতায় আসা সময়ের নানা অন্ধকার ও অপ্রাপ্তি তুলে ধরে তিনি মন্তব্য করেন যে, তারা ছোপ ছোপ রক্ত আর হাজারো লাশ দিয়ে গঠিত এই দেশকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ হাতজোড় করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিল, বলেছে, ‘অতীতে আমাদের দল বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যে অন্যায় ও জুলুম করেছে, আমরা বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। একবার ক্ষমতায় দিন, আমরা ভালো হয়ে যাবো। এখন দেশের জন্য কিছু করতে চাই।’ এ সময় তার সাথে তসবিহ ছিল এবং মাথায় ঘোমটা পরা ছিল।তিনি বলেন, আজকের দিনে জনগণ তাদের বদলানোর আশায় ছিল। কিন্তু তারা বোঝেনি, ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রকৃত রূপ আবার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে বলেন, ‘আমাদের দল যদি এক জনকেও হত্যা করে, তবে তার বদলে দশটি লাশ ফেলে দিতে হবে।’ এই হুঁশিয়ারি যে দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিল, তা স্পষ্ট। তিনি বলেছিলেন অশান্তি ও হত্যাকাণ্ডের কারণে একই সময়ে নদী, খাল, বিলে অজস্র লাশ পড়ে থাকত।আওয়ামী লীগের ইতিহাসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত একনায়কতন্ত্র চালু ছিল, যার ভয়াবহতা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। জনগণ আশা করেছিল, এই ভয়াবহ অভ্যুত্থান থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। এরপর তারা ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতায় এসে ক্ষমা চায় হাতে তসবিহ নিয়ে। ২০০৯ সালে আবার সরকারে আসে। এই তিনবারের শাসনামলে দেশের একাধিক এলাকার মানুষ নিহত হয়, নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়। তিনি নোয়াখালী সদরে এক মানুষের মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনের ঘটনা উল্লেখ করেন।একাত্তরের ইতিহাস সরাসরি তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক সবাই বুক চিতিয়ে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখেছিল, দেশের সব বৈষম্য দূর হবে ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলায় এসব স্বপ্ন ভেঙে যায়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে সেনা, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ থাকলেও রক্ষীবাহিনী গঠন করে নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়। মন্ত্রী ছেলেরা ব্যাংক লুটে লিপ্ত হয়। ৭৪ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে শত শত মানুষ লাশ পড়ে থাকত, তাদের দাফনের জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা ছিল না। তারা শ্লোগান দিয়েছিল সোনার বাংলা গড়ার, কিন্তু পরিণতিতে দেশ শ্মশানে পরিণত হয়। এর ফলশ্রুতিতে তাদের কার্যক্রম দুনিয়া ত্যাগ করে।তিনি যুবকদের উদ্দেশে বলেন, অতীতের সব খারাপ রাজনীতি পায়ে ঠেলে দিতে হবে। এখন দেশের রাজনীতি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে। এমন রাজনীতি যা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারীদের বিপক্ষে।ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের দলের জয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষ যেন বিজয় অর্জন করে, এই বিজয়ের জন্য যারা বাধা দেবে, তাদের এই যুবসমাজ লাথি মেরে সরিয়ে দেবে।’ তিনি নির্বাচনি কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কোনো উপকার চাই না। তবে যদি কমিশন কারও প্রতি কিছু বিষয়েও তোষামোদি করে, তা আমরা সহ্য করব না। আমরা চাই, নিরপেক্ষভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, আপনারা নিজের শপথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন।’
Leave a Reply