ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানায় পরিচালিত একটি জাতিসংঘ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অন্তত দুই ডজনের বেশি জাতিসংঘ কর্মীকে আটক করেছে। এই ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে চলা পরিস্থিতির মধ্যে নতুন এক সংকটের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর মুখপাত্র জিন আলম জানিয়েছেন, রবিবার সকালে সানার হাদা জেলাভেক জোনের এক কম্পাউন্ডে কর্মীদের আটক করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন ইয়েমেনি কর্মচারী এবং ১৫ জন আন্তর্জাতিক কর্মী রয়েছেন। পাশাপাশি, আরও ১১ জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
আলম বলেন, এই গুরুতর পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানে জাতিসংঘ যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সকল আটকদের মুক্তি ও সানার উপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে হুথি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
একজন নিরপেক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় হুথি বাহিনী কম্পিউটার, ফোন, সার্ভারসহ সব যোগাযোগ সরঞ্জাম জব্দ করেছে। এই সব কর্মীরা বিভিন্ন সংস্থা যেমন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), ইউনিসেফ, ও মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে হুথির এই আচরণ বেড়েই চলেছে, যেমন সানা, হোদেইদাহ বন্দরনগরী এবং উত্তরের সাদা প্রদেশে। সাম্প্রতিক সময়ব্যাপী এই অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর হুথিদের দমন-পীড়ন বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ৫০ জনেরও বেশি কর্মী আটক রয়েছেন। হুথিরা বারবার জাতিসংঘের কর্মী ও বিদেশি এনজিও এবং দূতাবাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তোলে, যদিও সংস্থাটি তা অস্বীকার করেছে।
প্রতিক্রিয়ায়, জাতিসংঘ এই বছর শুরুর দিকে সানায় একাধিক কার্যক্রম স্থগিত করে। তারা তাদের শীর্ষ মানবিক সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তার কারণে সানা থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করে।
শনিবার জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা আমাদের ৫৩ জন সহকর্মীর মুক্তি পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’ এই প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও, হুথি নেতা আবদেলমালেক আল-হুথি টেলিভিশনে ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা এই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের তদন্ত করছি, ও আমাদের লক্ষ্য দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা।’
অবশেষে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে কমপক্ষে ২১ জন কর্মীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই দীর্ঘ ১০ বছরের সংঘাতের কারণে ইয়েমেন এখন আরব বিশ্বে অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত, যেখানে লাখ লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই সংকট বন্ধ করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র: আলজাজিরা
Leave a Reply