ইয়েমেনের শীর্ষ সামরিক নেতা ও হুথি বিদ্রোহীদের চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ আবদুল করিম আল-ঘামারি ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাটি ঘটে যখন তিনি তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। উল্লেখ্য, এই হামলায় তার কিশোর ছেলে ও বিভিন্ন সহকারীরাও নিহত হয়েছেন। হুথিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আল-ঘামারি হামলার শিকার হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মকান্ডের মাঝেই প্রাণ হারান। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, হুথিদের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘আল-ঘামারি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ভবিষ্যতেও কোনো হুমকি দেখা দিলে আমরা একই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেব।’ হুথিরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। তারা বলেছেন, ‘ইসরায়েল তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।’ গত আগস্ট মাসে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় আল-ঘামারি ও হুথি সরকারের আরও কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন। এই আঘাতে হুথি-শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। আল-ঘামারি নিহত হওয়ার খবর এসেছে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান ষষ্ঠ দিনে ‘যুদ্ধবিরতি’ চলাকালীন সময়। এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘ দুই বছরের সর্বশেষ বিরতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনের হুথিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, দাবি করে যে এই হামলাগুলো ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শনের অংশ। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোও লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তাদের আক্রমণের শিকার। এই হামলার প্রতিশোধে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই অঞ্চলে হুথিদের অবস্থানে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে। আল-ঘামারির মৃত্যুর পর হুথিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের ‘নৃশংস’ হামলা সত্ত্বেও ইয়েমেনের জনগণ ধৈর্য্য ও শক্তির সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। তারা দাবি করেছে, আল-ঘামারির নেতৃত্বে ইয়েমেনের সেনা ও নৌবাহিনী মোট ৭৫৮টি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, যেখানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১৮৩৫টি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। হুথি নেতা আবদেল-মালিক আল-হুতি বলেন, গাজার সমর্থনে রাজনীতিক ও সামরিক অভিযানে আল-ঘামারির ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। এটি আমাদের প্রতিরোধের প্রতিফলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনের জনগণকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টার মধ্যেও ইয়েমেন প্রতিবন্ধকতা চালিয়ে যাচ্ছে। আল-ঘামারির মৃত্যুর পরেও আমাদের নেতৃত্ব ও সেনারা এই পथ অব্যাহত রাখবে।’গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুথিরা বলেছিল, তারা এই বিরতির শর্ত মানছে। তবে যদি ইসরায়েল চুক্তি অমান্য করে, তাহলে তারা আবার গাজায় সমর্থন পুনরায় চালু করবে।
Leave a Reply