ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রায় আড়াই শ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। রোববার রাতে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, এদিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল ও তেল আবিব লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা।
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, প্রথমবারের মতো তারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আশদ নৌঘাঁটিতে ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। পরে সংগঠনটি আবার জানায়, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে তেল আবিবের একটি ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ মুহুর্মুহু হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া তেল আবিবের উপকণ্ঠে গ্লিলট সেনাবাহিনী গোয়েন্দা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা।
হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে প্রথমে এ সম্পর্কে এএফপির কাছে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এর আগে তারা জানায়, তেল আবিবের উপকণ্ঠসহ উত্তর-পূ্র্ব ও মধ্য ইসরায়েলের একাধিক জায়গায় সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। আকাশপথে হামলা হলে এমন সাইরেন বাজানো হয়।
পরে এএফপির সঙ্গে কথা হয় ইসরায়েলি বাহিনীর। তখন তারা জানায়, হিজবুল্লাহর ছোড়া প্রায় আড়াই শ ক্ষেপণাস্ত্র লেবানন থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে। এর আগে রোববারই ১৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছিল তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, এর মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে থাকতেই ধ্বংস করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অন্তত চারটি ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে মোহাম্মদ আফিফ নামে হিজবুল্লাহর একজন মুখপাত্র নিহত হন। এরপর গত বুধবার এক বক্তৃতায় হিজবুল্লাহপ্রধান নাইম কাসেম বলেন, বৈরুতে ওই হামলার জবাব তেল আবিবে হামলার চালানো মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।
চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, রোববারের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা কিছুটা গুরুতর। আর ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীরের তুলকারেম শরণার্থীর শিবিরের কয়েকটি বাড়ির ওপর আছড়ে পড়ে একটি ক্ষেপণাস্ত্র (ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়)। এতে ১৩ জন আহত হন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। প্রথমে আকাশ পথে হামলা হলেও, পরে দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করেন ইসরায়েলের সেনারা। ইসরায়েলি বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে হিজবুল্লাহ একদিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর। সেদিন ইসরায়েলে ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। ২০০৬ সালে একবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে তারা। গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আবারও পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই পক্ষ। প্রথমে তা সীমিত পর্যায়ে থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে তীব্র আকার ধারণ করে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় দেশটিতে অন্তত ৩ হাজার ৬৭০ জন নিহত হয়েছেন।
Leave a Reply