ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সাদিক কায়েম। বিজয়ের পরদিন বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই বিজয় কোনো ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সাফল্য।
সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু নির্বাচনে কেউ হেরেছেন না; এখানে জয়ী হয়েছে সকল শিক্ষার্থী, জয়ী হয়েছে জুলাইবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা, জয়ী হয়েছে শহীদদের স্বপ্ন। এটি আমাদের সকলের collective victory এবং এটি শহীদদের আত্মত্যাগের ফসল। তিনি স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ, আধিপত্যবিরোধী সংগ্রামের শহীদ এবং বিশেষ করে শহীদ আবরারকে, যিনি ছাত্ররাজনীতির সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারান। আল্লাহ তাদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন বলে কামনা করেন।
নিজের দায়িত্ববিষয়ক বক্তব্যে সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে এবং আমার সহযোদ্ধা এস এম ফরহাদ ও মহিউদ্দিন খানসহ পুরো প্যানেলকে যে আস্থা দিয়েছেন, আমরা সেই আস্থার মর্যাদা রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা যে স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার করেছি, তা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই না শিক্ষার্থীরা শুধু আমাকে ভিপি হিসেবে দেখুক; বরং তারা আমাকে বন্ধু, ভাই ও সহপাঠী হিসেবে জানুক। আমার আচরণ বা ভাষা যেন কোনোভাবেই অহংকার বা গর্বের প্রকাশ না হয়, সেজন্য আমি গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখব।
একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর করার লক্ষ্য ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা চাই একটি এমন ক্যাম্পাস, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উন্নত পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে। সেখানে গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসন নিশ্চিত হবে, খাবার ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হবে। নারীদের জন্য থাকবে নিরাপদ ও সমানাধিকারের পরিবেশ।
তিনি নারী শিক্ষার্থীদের অবদানকে বিশেষভাবে স্বীকার করেন এবং বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সফল আয়োজন ও জুলাইবিপ্লবের সময় নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এটি তাদেরও অধিকার।
সাদিক কায়েম বলেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তারা কেউ আমাদের শত্রু নয়; তারা সবাই এখন পরামর্শদাতা। সব মতপক্ষে থাকা সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে এক গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমি তার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই। পাশাপাশি যারা এই নির্বাচনের কাভারেজ করেছেন, তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাদিক কায়েম আরও বলেন, এই দায়িত্ব একটি কঠিন পরীক্ষা। আমরা চাই, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব। শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ও আধুনিক, মানবিক ক্যাম্পাস গড়ার জন্য সবাইের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।
Leave a Reply