বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আজ আর আমাদের মধ্যে নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় তিনি পৃথিবীর আলোর আলো থেকে চিরবিদায় নেন। তাঁর অকাল মৃত্যু দেশের রাজনীতি ও জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে থেকে থাকবে।
খালেদা জিয়া ছিলেন এক অসাম্প্রদায়িক, আপসহীন নেতা, যিনি জীবনে কখনো নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেননি। প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি তিনটি সংসদ নির্বাচনে প্রতিবারই জয় লাভ করেন এবং তিনি নির্বাচনী এলাকাগুলোর ইতিহাসে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়ী হন।
অবাক করা বিষয় হলো, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে, এমনকি ২০১৮ সালে তার দুর্নীতির মামলার কারণে আদালতের বিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনও বিএনপি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে, তিনি অনেকটা ক্ষমতা থেকে দূরে থাকলেও, তার প্রতিপত্তি ও জনপ্রিয়তা আজও অবিচল। দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে তিনি তার আসনকে নিয়ে ভাবতে পারেননি। তবুও, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি তার তিনটি আসন থেকে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্বকাল ছিল ছয় বছর, তবে দ্বিতীয় দফায় মাত্র এক মাসের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিজয়ী হয়। ওই সময় তিনি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী আনা হয়, যা রাষ্ট্রপতি শাসিত থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর একমাসের জন্য তিনি ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী থাকেন। পরবর্তীতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে ২০০১ সালে পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হন, তবে ওই নির্বাচনে তার দল বিএনপি হেরে যায় এবং তিনি হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।
২০০১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি বিরোধী দলের নেতৃত্বে থাকেন। কৈশোর থেকে শুরু করে রাজনীতিতে তাঁর পথচলা ছিল সংগ্রামী, আর তার সাহস ও নেতৃত্বের জন্য তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
Leave a Reply