জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি শুক্রবার প্রকাশ করেন, ভারত এখন যেন “লিঞ্চিস্তান” এ পরিণত হয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, দেশের অসহিষ্ণুতা দিন দিন বাড়ছে এবং বাংলাদেশে লিঞ্চিং নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তারা ভারতের ঘটনাগুলির বিষয়ে নীরব থাকছেন। অনলাইন টেলিগ্রাফ এ খবর প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, ‘লিঞ্চিং’ শব্দের অর্থ হচ্ছে জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা। ইলতিজা ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে মন্তব্য করেন, “না ইন্ডিয়া, না ভারত, না হিন্দুস্তান—তোমার নাম লিঞ্চিস্তান।” এই পোস্টে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের ওড়িশায় ১৯ বছর বয়সি এক বাংলাদেশি মুসলিম শ্রমিক জুয়েল শেখের লিঞ্চিং সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও শেয়ার করেন, যেখানে বলা হয় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং তাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পরিচিত করা হয়।
এছাড়াও, তার মা এবং পিডিপির প্রধান, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি দেশের বিচারব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভারতের বিচার ব্যবস্থা গভীরভাবে রাজনীতিকরণ হয়ে পড়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মেহবুবা মন্তব্য করেন, দেশের অসহিষ্ণুতা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে, লিঞ্চিং ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা আমাদের জন্য দুঃখের। তবে যারা এ বিষয়ে সমালোচনা করছেন, নিজেদের সামনেই যদি ঘটনাগুলি ঘটত, তবুও তারা মুখ খোলতেন না।
তিনি জানিয়ে থাকেন, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানায় কাশ্মিরি শাল ব্যবসায়ীদের ওপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণপন্থি কিছু দল তাদের জোরপূর্বক নির্দিষ্ট স্লোগান দিতে বাধ্য করছে এবং অস্বীকার করলে মারধর করছে।
হাইকোর্টে তার দাখিল করা জনস্বার্থ মামলা (PIL) খারিজ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক কাশ্মিরি হাজতিদের জম্মু-কাশ্মীরে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তাকে আদালত নাকচ করে দিয়ে বলে, এটি নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মেহবুবা বলেন, আমার চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করা আদালতের কাজ নয়। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এই অধিকার আমার রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি অরুণ পালি ও বিচারপতি রাজনেশ ওসওয়ালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দেন যে, তার আবেদন অপ্রমাণিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ে বলা হয়, মেহবুবা মুফতি এই মামলা দায়ের করেছেন ‘রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ এবং একটি নির্দিষ্ট সমাজের পক্ষে ন্যায়যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে’।
রায়ের পর হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যখন পিআইএল করতে পারে, তখন একজন রাজনীতিবিদ কেন পারবেন না? তিনি আরও বললেন, রাজনীতিবিদরা তাদের দলের কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তিনি যোগ করেছেন, গরিব পরিবারের সদস্যরা কত কষ্টে থাকেন, তাদের নিজস্ব আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, বাইরে গুলি জেলে বন্দি থাকাকালীন নিজেদের মামলার কি অবস্থা!
Leave a Reply