তাজনূভা জাবীন এবার নিজ অবস্থানে থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে নিজের সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন। এনসিপি থেকে তাঁকে ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও, শেষ মুহূর্তে ঘটে যাওয়া কিছু রাজনৈতিক գործընթացে তিনি হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেন বিদায়ের।
স্ট্যাটাসে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, অনেকের ধারণা হয়তো জামায়াতের সঙ্গে জোটের ঐতিহাসিক অর্থ কিংবা নারী বিষয়ক প্রস্তাবের জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তার মতে, এর চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এই জোটের গোপন প্রক্রিয়া এবং ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পনা করে সাজানো হয়েছে এবং বিশ্বাসের বিনিময়ে এভাবে এগুচ্ছে, যা তার জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়। কিছুদিন আগে পুরো জাতীয় মনোনয়নপ্রক্রিয়ার সময় তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন, অথচ শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, অন্যরা মনোনয়ন পেলে তিনি নিজের লড়াই চালিয়ে যেতে পারছেন না।
তাজনূভা আরও উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন মাধ্যমে নানা খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তাঁর মনোনয়ন হারানোর ভয়েই তিনি জোটের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেন, যতই কষ্ট হোক, তিনি আগেও বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ কঠিন হলেও তিনি নির্বাচন করবেন। কিন্তু তারা তার প্রত্যাশাগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এর মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যাচ্ছে, চরমোনাই পীরের ৭০টি আসনে এরা একত্রে কাজ করছে, এবং গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত দলের ৩০টি আসনে রাজনৈতিক সমঝোতা চলছে।
তাজনূভা জানাচ্ছেন, শুরু থেকেই তিনি গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক, এবং নারীর অধিকারসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার স্বার্থে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেই পার্টির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যার মূল নীতি ও ভাবনা ছিল রাজনীতি একান্তভাবে গণবিরুদ্ধ নয়। কিন্তু বছর কয়েকের মধ্যে পার্টির ভেতরে সংকট এবং অরাজনৈতিকতা অপ্রত্যাশিত অন্ধকারে ডুবতে শুরু করে। তাঁর মতে, পার্টির অনেক শীর্ষ নেতা নিজেদের মধ্যে রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ লুকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং দেশের জন্য নতুন ও প্রকৃত আঞ্চলিক ও গণনীতির উন্নয়নের পরিবর্তে ব্যর্থতার রাজনীতি চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “এনসিপি এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে এই ভণ্ডামির মধ্যে। আমি আছি, তবে এখন অনেকটাই হতাশ এবং বিরক্ত। আমি চাই, পার্টির আসল নীতি, গণমুখী রাজনীতি ফিরে আসুক। আমি সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।”
জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর থেকেই তিনি ভাবছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু অবশেষে আজ ঘোষণা দিলেন, কারণ প্রক্রিয়া ও বিশ্বাসের অভাব তাঁর মনকে ভেঙে দিয়েছে। তিনি বলেন, “নেতৃত্বের শুরুতেই গঠনের প্রক্রিয়া অন্যায় ও অনিশ্চিত ছিল। এখন বুঝতে পারছি, পার্টি অনেক বড় হলেও এর ভিতরকার অসংগতি ও বিশ্বাসের ঘাটতিই একদিন বড় বিপদ ডেকে আনবে।”
উপসংহারে তাজনূভা জানান, তিনি আজ নিজেকে শক্ত করে রাজনৈতিক দলের বাইরে ঘোষণা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি এখন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেব না, কারণ আমি বিশ্বাস করি না, এই জোট ও এই প্রক্রিয়া দেশের জন্য শুভ নয়। আমি আমার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাকে সমর্থন করেছেন। আমি আমার সমস্ত অর্থ, সময় ও আত্মসম্মানকে আগের মতো মূল্য দিচ্ছি। আপনাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
তিনি জানান, সকল অনুদান ফিরিয়ে দেবেন এবং ধীরে ধীরে তার সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আসন ফিরিয়ে দেবার পরিকল্পনা রয়েছে। শেষবারের মতো বলেন, “আমি আগামী দিনগুলোতেও জনগণের জন্য কাজ করবো, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো। আমার লক্ষ্য থাকবে, সত্য ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গঠন।”
উল্লেখ্য, শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা প্রথম আধ্যাত্মিকভাবে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন। এই সিদ্ধান্তের পর আজ তাজনূভা জাবীনও দল ছাড়ার ঘোষণা দেন।
Leave a Reply