বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় বিশেষ একটি সেনা ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তিনি জানান, পাকিস্তানের বা অন্য কোন বাহিনীর ষড়যন্ত্র ঠেকাতে এবং সীমান্তের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব সেনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের সেনাবাহিনীর অংশ ছিল এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, সেই সেনাদের একটি ব্যাটালিয়ন বর্তমানেও ত্রিপুরায় অবস্থান করছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনার মাউন্টেন ডিভিশন, বিশেষ করে ২০তম, ৮ম, ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ ডিভিশনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা বর্তমান বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তে সেনা উপস্থিতি অনেকেরই একদম স্পষ্ট নয়, কিন্তু আধুনিক যুদ্ধের জন্য শারীরিক উপস্থিতির আবশ্যকতা তাদের নেই। তিনি দেন ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর উদাহরণ হিসেবে, যেখানে এক ক্লিকে শত্রু ধ্বংস সম্ভব হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীলতার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তার মতে, শেখ হাসিনাকে আন্দোলন থেকে সরাতে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন মৌলবাদী, অপরাধী এবং চোর বাংলাদেশের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। আরও তিনি উল্লেখ করেন, মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়াও ভারতের বিরোধী শক্তির পরিকল্পনা। শেষ পর্যন্ত তিনি বোঝান, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ত্বে ভারতের সুরক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত এবং দেশের দায়িত্বশীল নেতৃত্বে দেশ নিরাপদে রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা জটিলতা বিবেচনায় ভারত সীমান্তে সতর্কতা জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে, ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান ভারতীয় সেনা ও বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সংলগ্ন দক্ষিণ ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। কর্মকর্তারা করোনিয়া মহকুমার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। ত্রিপুরার দীর্ঘ ৮৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্তের বড় অংশ এখনও কাঁটাতারবিহীন রয়েছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.সি. তিওয়ারি ও তার দল সীমান্তের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। অফিসাররা ভারতীয় সেনা, আসাম রাইফেলস ও বিএসএফের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি দেখেন এবং প্রশংসা করেন তাদের পেশাদারিত্বের জন্য। এভাবে, ভারতীয় বাহিনী সীমান্তের নিরাপত্তা আরও জোরদার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
Leave a Reply